কামারপাড়ায় ঘুম নেই
আজ বাদেই কাল ঈদুল আজহা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, কামারপাড়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে। তাঁদের ঘুম নেই। রাতদিন টুং-টাং শব্দে কোরবানির পশু জবাইয়ে ব্যবহৃত দা-ছুরি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা।
আজ রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর শনির আখড়া, কারওয়ান বাজার কামারপাড়ায় রাতদিন এক করে কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। আর তাঁদের বানানো বিভিন্ন চাপাতি, দা, ছুরি দরদাম করে কিনছেন ক্রেতারা।
শনির আখড়ার দোকানি গোপাল বণিক বলেন, ‘ব্যবসা ভালোই চলছে। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের জন্য আমরা নিরলস রাতদিন এক করে কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ক্রেতাদের বেশি পছন্দ হলো চাপাতি। কারণ, বাসাবাড়িতে যারা নিজেরা কোরবানি দেয়, তারা কসাইয়ের সঙ্গে নিজেরাও মাংস বানায়। তাই অতিরিক্ত চাপাতির প্রয়োজন হয়।
গোপাল বলেন, এবারে লোহার দাম বেশি হওয়ায় চাপাতি ৯০০ থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া ছুরি, দা বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।
নন্দী পাল নামের আরেক কামার বলেন, ‘ভাই, দেখতেই তো পাচ্ছেন, কাজের কত চাপ। কথা বলার সময় দিতে পারছি না। বাসায় পাঁচ দিন ধরে যাই না। এখানে থাকি আর এখানেই কাজ করি। আজকে ঈদের আগের দিন, তাই বেশি ব্যবসা হবে।’ এ ছাড়া অনেকে পুরোনো দা-চাপাতি মেরামত ও শান দিতে নিয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।
গফুর নামের এক ক্রেতা বলেন, তিন শরিক মিলে গতকাল গরু কিনেছেন। আজকে চাপাতি ও চিকন ছুরি কিনতে এসেছেন। তবে দাম বেশি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মাহিন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘তিনটি চাপাতি কিনতে এসেছি। দাম-দর করে কিনতে পারতেছি না। দোকানিরা সুযোগ বুঝে দাম বেশি চাইছে। সবকিছুর মনিটরিং হলেও এদের কোনো মনিটরিং নেই। যার থেকে যা পাচ্ছে তাই দাম নিচ্ছে। বাধ্য হয়ে এখন দাম দিয়ে নিতে হবে, কিছু করার নাই।’
এদিকে কারওয়ান বাজারের কামারপট্টিতে বিক্রেতা হোসেন বলেন, ‘আমাদের কারখানা মুগদা, শনির আখড়া ও নারায়ণগঞ্জে। আমরা মালামাল সেখানে থেকে নিয়ে আসি। এবারে লোহার দাম বাড়ানোর ফলে আমাদের দাম বেশি রাখতে হচ্ছে। তবে আমাদের কাছ থেকে ক্রেতারা খুশি মনে দা-ছুরি কিনছেন।’
হোসেন আরো বলেন, বর্তমানে ছোট আকারের ছুরি প্রতি পিস ১০০ টাকা। মাঝারি ছুরি ২৫০ টাকা ও বড় আকারের ছুরি ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দা ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে। চায়নিজ কুড়াল বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া চাপাতি ৯০০ থেকে দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে কামারপাড়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে।