দুই লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম ৪০০!

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর সাইন্স ল্যাবে আজ সোমবার অস্থায়ী চামড়ার হাট। ছবি : সাইফুল সুমন

রাজধানীতে এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম আরো কমে গেছে। মাঝারি আকারের একটি গরুর চামড়ার দাম উঠছে ৩০০ টাকা। আর ছাগলের চামড়ার দাম ২০ টাকা!  দুই লাখ টাকা দামের একটি বিশাল গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকায়! আজ সোমবার ঈদুল আজহার দিনে সাইন্স ল্যাবে অস্থায়ী চামড়া হাট ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

ল্যাব এইড হাসপাতাল ও সাইন্স ল্যাবের মাঝামাঝি স্থানে বসেছে চামড়ার ওই হাটটি। সেখানে তিনটি গরুর চামড়া নিয়ে এসেছেন জাহাঙ্গীর আলম। একটি চামড়া তাঁর গরুর। বাকি দুটি দুই ভাইয়ের দুই গরুর। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘তিনটি চামড়ার দাম বলছে মোট ৯০০ টাকা। এত কম দামে কীভাবে বিক্রি করি? গরিবের টাকা ব্যবসায়ীরা মেরে খাচ্ছে!’

নজরুল ইসলাম মানিক এসেছেন রাজধানীর কলাবাগান থেকে। তিনি একটি গরু ও একটি ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে বিক্রি করেছি। গরুর চামড়া বিক্রি করেছি ৪০০ টাকায়। অথচ দুই লাখ টাকার গরু আমার। আর ছাগলের চামড়া বিক্রি করেছি ২০ টাকায়! এটা দাম হলো বলেন? ব্যবসায়ীরা কি মানুষ? সরকারই বা কী?’

পাপ্পু নামের একজন চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, ‘ট্যানারি মালিকরা আমাদেরকে বেশি দাম দেয় না। আমরা কীভাবে বেশি দামে কিনব? এই যে কয়েকটি গরুর চামড়া ৩০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। এই চামড়ার দাম গতবার ছিল কমপক্ষে ৬০০ টাকা। গতবার যে চামড়ার দাম দিয়েছি ১ হাজার ১০০ টাকা, এবার সেই চামড়ার দাম দিচ্ছি ৬০০ টাকা। অন্তত তিন লাখ টাকা দামের গরুর চামড়ার দাম এবার ৬০০ টাকা।’

রাজধানীর সাইন্স ল্যাবে অস্থায়ী চামড়ার হাটে ছাগলের চামড়া থেকে মাংস ও চর্বি ছাড়িয়ে নিচ্ছেন সাদিক ও তাঁর লোকজন। ছবি : এনটিভি

নারায়ণগঞ্জ থেকে হোটেল ব্যবসায়ী সাদিক এসেছেন ছাগলের চামড়া কিনতে। তবে তিনি ওই চামড়া কেনার কিছু সময় পর আবার বিক্রি করে দেবেন। কারণ তিনি আসলে চামড়া কেনার উদ্দেশ্য নিয়ে হাটে আসেননি। এসেছেন, ছাগলের চামড়া থেকে মাংস বা চর্বি ছাড়িয়ে নিতে। মাংস বা চর্বি নেওয়ার পর চামড়া আবার বিক্রি করে দেবেন। 

সাদিক বলেন, ‘কোনো চামড়ায় এক কেজিও মাংস হয়। এখন যেটা ছাড়াচ্ছি এই চামড়ায় এক কেজি মাংস হবে। মাংস ছাড়ানো হয়ে গেলে এখনই বিক্রি করে দেব চামড়া। ২০ টাকা দিয়ে একটি চামড়া কিনেছি। এর চেয়ে বেশি দামেও বিক্রি করতে পারব এই চামড়া।’

সাইন্স ল্যাবের চামড়ার হাটে এসব নিয়ে কথা হয় ট্যানারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাখায়াত উল্লাহর সঙ্গে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সারা জীবন একই কথা বলবে। ওদের মুখে সব সময় লেগে থাকবে দাম কম আর দাম কম। এবার কিন্তু খুব একটা দাম কম না। আমি এই হাট থেকে ৬০০ চামড়া কিনেছি। যেখানে ৪০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দামের চামড়া আছে।’

সাখায়াত উল্লাহ বলেন, ‘তবে এখানে একটি সমস্যা আছে। সেটা হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা একটি চামড়ায় অন্তত ২০০ টাকা লাভ করবে। আর একটি চামড়ায় লবণ খরচ যাবে ৩০০ টাকা। লবণ খচর বাদ দিয়ে ট্যানারির মূল ব্যবসায়ীরা আরো ১৫০ থেকে ২০০ টাকা লাভ করবে। এতে অরজিনাল বিক্রেতার ক্ষতি হয়। লাভ করে সব মধ্যস্বত্বভোগীরা।’ 

গত ৬ আগস্ট কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সারা দেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা। আর বকরির চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা। সেদিন সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি চামড়ার এ দাম ঘোষণা করেন।