কতগুলো প্রশ্নের সমাধান পেলে শান্তিতে মরতে পারব : নানক

Looks like you've blocked notifications!
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। ছবি : সংগৃহীত

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যা পরবর্তী সময়কার আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। ইতিহাসের জঘন্যতম ওই হত্যাকাণ্ড নিয়েও কতগুলো প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সেসবের সমাধান চেয়েছেন তিনি। সমাধান পেলেই তিনি শান্তিতে মরতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।

সাবেক স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, পঁচাত্তরের পর আমরা যদি লড়াই করতে পারি তাহলে আমাদের নেতৃত্ব কোথায় ছিল সেদিন? সেদিন কারা ছিল নেতৃত্বে? তাদের মুখোশ উন্মোচণ করে দিতে হবে। তাহলে আমরা শান্তিতে মরতে পারব।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় জাহাঙ্গীর কবির নানক এ কথা বলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে একটি পত্রিকার বরাত দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নানক বলেন, সেদিন ব্যর্থতা ছিল সবার। রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, রক্ষীবাহিনী, বিডিআর, গোয়েন্দা সংস্থা কেউই সেদিন এগিয়ে আসেনি।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সেদিন কেমন ছিল ১৫ আগস্ট। সেদিন কিছুই ঠিক ছিল না। সেদিনের কথা যদি মনে করি অনেক দীর্ঘ কথা। অনেক প্রশ্ন থেকে গেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রশ্ন থেকেই যাবে। এই মুহূর্তে যদি মৃত্যু কিংবা আগামী যে কোনো সময় মৃত্যু হোক না কেন, কতগুলো প্রশ্নের সমাধান আমরা আজও পাইনি। সেই প্রশ্নের সমাধান আমরা চাই। আমরা সেদিন যেভাবে সারা বাংলাদেশে ঘুরে বেড়িয়ে ছিলাম ছাত্রনেতা হিসেবে। একজন বৃদ্ধ আমাদের গলা ধরে বলেছিলেন, বাবা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দেখে যেতে পারব তো? আপনি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের রায় আপনি করেছেন। কিন্তু আমাদের কাছে আজ যখন প্রশ্ন করে, বা প্রশ্ন জাগে নতুন প্রজন্মের ছাত্রলীগ যখন প্রশ্ন করে আমাকে, আমার নাতনি যখন প্রশ্ন করে কে মারল বঙ্গবন্ধুকে, কিভাবে মারল, এ প্রশ্নের সঠিক জবাব সদুত্তর আমরা দিতে পারি না।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী নানক বলেন, ‘সেদিন ১৫ আগস্ট, আমু (আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু) ভাই এখানে বসা রয়েছে। আমরা পালিয়ে যাইনি। আমাদেরকে কামাল (বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল) ভাই সেদিন রেখেছিলেন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। আমরা এসেছিলাম রাত দেড়টার সময়ে। কামাল ভাই যখন (ঢাকা) বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যখন চলে যান, আমাকে বলেছিলেন, নানকা আমি গিয়ে তৈরি হয়ে আসছি। তোরাও গিয়ে তৈরি হয়ে আয়। কারণ বঙ্গবন্ধু আসবেন (ঢাকা) বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম আর কামানের গোলার আওয়াজ মেশিন গানের আওয়াজে আমরা দিকবিদিক হারিয়ে ফেলেছিলাম।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান নানক বলেন, ‘এখানে আমু ভাই আপনার পাশে বসা, যখন শুনলাম বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, ২৯ নম্বর মিন্টু রোডে কৃষক লীগের সেরনিয়াবাদের বাসায় গিয়ে দেখি সব শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পর চলে গেলাম আলুবাজার ঢাকা হোটেলের পাশে আমু ভাইয়ের বাড়িতে। আমু ভাইকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম। আমু ভাই সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি করেছিলেন, আমরা কি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবে কিনা? আমি নির্দ্বিধায় নিঃসংকোচে বলে দিয়েছি, যাবে।’

পঁচাত্তরের একটি পত্রিকার বরাত দিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক  বলেন, ‘সেদিন ব্যর্থতা ছিল সবার। রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, রক্ষীবাহিনী, বিডিআর, গোয়েন্দা সংস্থা কেউই সেদিন এগিয়ে আসেনি। তাই নেত্রী, আমি আপনাকে এতটুকুই বলব, আমাদের কৃতজ্ঞ করেছেন, জাতিকে পাপমুক্ত করেছেন। আপনি না এলে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হতো না। কারণ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়ক যারা, সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। আমরা শুধু জেনেছি ডালিম, রশিদ, শাহরিয়ার, ফারুক, মোস্তাক এদেরকে আমরা চিনেছি। কিন্তু নেপথ্যের নায়ক?’

ছাত্রলীগের সাবেক এ নেতা বলেন, ‘কূটনীতিক শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি বলেছিলেন, এ (বঙ্গবন্ধুকে হত্যা) ষড়যন্ত্র অনেক আগে থেকেই হয়েছিল, জিয়াউর রহমান যখন লন্ডনে দূতাবাসে বসে বৈঠক করছিলেন, আমি সেদিন জিয়াউর রহমানের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি শেখ মুজিবকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে দিল্লিকে বার্তা দিয়ে ছিলাম। দিল্লি থেকে বার্তা পৌঁছায়ে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কাছে। কিন্তু কাদের দায়িত্ব ছিল ওই বঙ্গবন্ধুর বাড়িকে রক্ষা করার, বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করার? কেন দায়িত্ব পালন করেননি? কেন জাতি বঙ্গবন্ধুকে হারাল? কেন জাতি দার্শনিক মুজিবকে হারাল? কেউ কি ছিল না সেদিন ডাক দেওয়ার? তাই জাতির আজ একটি ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠ বেরিয়ে এসেছে ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের কারিগরদেরও দেখতে চায় জাতি।’

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘৭৬ সালে বরিশালে গিয়েছিলাম হরতাল করতে, গ্রেপ্তার হয়েছিলাম, শবে বরাতের রাতে সারা রাত আমাকে ফ্যানের সাথে টানিয়ে অত্যাচার করেছিল তবু  আত্মসমর্পণ করিনি। জেল থেকে যেদিন বেরিয়েছি ৩৬ মাস পর, আবার সেই দিনই মিছিল করেছি বরিশাল শহরে। আমরা যদি আত্মসমর্পণ না করে থাকি, আমরা যদি লড়াই করতে পারি, তাহলে আমাদের নেতৃত্ব কোথায় ছিল সেদিন? কারা ছিল নেতৃত্বে? তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিতে হবে। তাহলে আমরা শান্তিতে মরতে পারব।’