কাসেম ড্রাইসেলের এমডি তাসভীর গ্রেপ্তার
রাজধানীর বনানীর এফ আর (ফারুক-রূপায়ণ) টাওয়ারের নকশা জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় ভবনটির অন্যতম মালিক ও কাসেম ড্রাইসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসভীর-উল-ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে দুদক তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এফ আর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতি মামলায় দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আজকে দুপুরে সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে মামলার তিন নম্বর আসামি তাসভীর-উল-ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এফ আর টাওয়ার নির্মাণে নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগে গত ২৫ জুন দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকি বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ২ ও ৩। মামলায় ২৩ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদিম ও কে এ এম হারুন, এফ আর টাওয়ারের মালিক এস এম ফারুক, রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মুকুল, কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর-উল-ইসলাম, রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান, সাবেক অথরাইজড অফিসার-২ সৈয়দ মকবুল আহম্মেদ, সৈয়দ নাজমুল হুদা, সামছুর রহমান, সাবেক প্রধান ইমরাত পরিদর্শক মাহবুব হোসেন সরকার, সাবেক ইমারত পরিদর্শক আওরঙ্গজেব সিদ্দিকী, নজরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (এস্টেট) রেজাউল করিম তরফদার ও আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, সাবেক পরিচালক (এস্টেট) শামসুল আলম ও আব্দুল্লা আল বাকী, সাবেক উপপরিচালক (এস্টেট) মুহাম্মদ শওকত আলী, সাবেক সহকারী পরিচালক শাহ মো. সামসুল আলম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক (এস্টেট) জাহানারা বেগম ও মোফাজ্জেল হোসেন, সাবেক পরিদর্শক মেহেদউজ্জামান, নিম্নমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোল্লা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. এনামুল হক।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, অবৈধ নকশায় তৈরি হয়েছে এফ আর টাওয়ার। ১৫তলা থেকে গড়ে তোলা হয়েছে ২৩তলা বিশিষ্ট এই ভবন। ১৫তলা নকশার অনুমোদনেও মানা হয়নি কোনো নীতিমালা। নেই ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের অনুমোদন। ১৮ থেকে ২৩তলা নির্মাণের কোনো তথ্যই নেই রাজউকের কাছে। জমির মালিক ও ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি প্রশাসনের নাকের ডগায় নিজ সিদ্ধান্তে নির্মাণ করেছে বাকি পাঁচতলা। যারা আসামি হয়েছেন তাঁরা ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।
প্রথম ধাপে ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে সিভিল অ্যাভিয়েশনের শর্তসহ বিভিন্ন কারণে নকশা অনুমোদন না দিয়ে এফ আর টাওয়ার কর্তৃপক্ষকে ফিরিয়ে দিলেও পরবর্তী সময়ে ওই একই বছরের ডিসেম্বরে অদ্ভুত অজুহাতে ১৮তলার অনুমোদন দেয় রাজউক কর্তৃপক্ষ। অনুমোদন ফাইলে নোট ছিল, ‘আশপাশের যেহেতু ১৮তলা আছে, তাই নকশা অনুমোদন দেওয়া যায়।’ ফাইলে কাগজপত্র ছিল সবই ভুয়া। নেওয়া হয়নি এস্টেট শাখার অনুমোদনও।
গত ২৮ মার্চ দুপুরে এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগে। এতে নিহত হন ২৭ জন। দুর্ঘটনার পর পরই বনানীর এফ আর টাওয়ার নকশা অনুমোদনে জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক হোসেন ও রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল, কাশেম ড্রাইসেল ব্যাটারির মালিক ও এফ আর টাওয়ারের বর্ধিত অংশের মালিক তাসভীর-উল-ইসলাম এবং রাজউকের সংশ্লিষ্ট ইমারত পরিদর্শকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।