খুলনায় সহপাঠীকে ধর্ষণ ও অন্তঃসত্ত্বা : শিঞ্জন রায় রিমান্ডে

Looks like you've blocked notifications!
সহপাঠীকে ধর্ষণ ও অন্তঃসত্ত্বা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার শিঞ্জন রায়। ছবি : এনটিভি

খুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সহপাঠীকে ধর্ষণ ও অন্তঃসত্ত্বা করার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া শিঞ্জন রায়ের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ রোববার দুপুরে খুলনা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মো. শাহীদুল ইসলাম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শিঞ্জন রায়ের পক্ষে অর্ধশত আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। তাঁরা রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন জানান। অপরদিকে বাদীর পক্ষে খুলনা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার আইনজীবী অ্যাডভোট মোমিনুল ইসলাম জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আসামি শিঞ্জন রায়কে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

খুলনার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিঞ্জন রায় তাঁর এক সহপাঠীকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে প্রায় দুই বছর ধরে একসঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন। এর ফলে ওই সহপাঠী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। কিন্তু তাঁকে বিয়ে না করে ১৪ আগস্ট অন্য মেয়েকে বিয়ে করেন শিঞ্জন। ঘটনা জানতে পেরে ১৫ আগস্ট রাতে অন্তঃসত্ত্বা ওই ছাত্রী প্রেমিক শিঞ্জন রায়ের বাসায় গিয়ে দেখা করেন। এ সময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার হলে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দুইজনকেই থানায় নিয়ে যায়। এর পর মেয়েটি শিঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। সেই মামলা গ্রেপ্তার হয়ে শিঞ্জন রায় বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে শিঞ্জন রায়ের সঙ্গে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক। তাঁরা বিভিন্ন সময় খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে একত্রে বসাবাস করে আসছিলেন। এভাবে পূর্ব বানিয়া খামার মসজিদ রোডে খন্দকার আজাহারের বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে বসবাস করেছেন।

সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কুমকুম নাজমুন নাহার জানান, ওই বাড়িওয়ালা পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, শিঞ্জন রায় ও তাঁর সহপাঠী স্বামী-স্ত্রী। তাঁরা তাঁদের বাসায় বসবাস করতেন। একইভাবে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হোটেল ভাড়া নিয়েও ওই তরুণীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করা হয়েছে।

এজাহারে আরো বলা হয়েছে, শিঞ্জন রায় ও তাঁর সহপাঠী সমুদ্র সৈকতে গিয়ে হোটেলে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করেছেন। কিন্তু শিঞ্জন রায় তাঁর প্রেমিকার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন।

শিঞ্জন রায়ের বাবা সুশান্ত কুমার রায় খুলনার কর কমিশনার। ১৪ আগস্ট শিঞ্জন রায়ের বিয়ের আগেই পরিবারের লোকজন তাঁর প্রেমের কথা জানতেন। ১৫ আগস্ট রাতে থানায় দুইজনকে নেওয়ার পর শিঞ্জন রায়ের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে কোনো মামলা হবে না। এজন্য সুশান্ত কুমার রায় পুলিশকে দুই কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন বলে জানিয়েছেন সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কুমকুম নাজমুন নাহার।

কুমকুম নাজমুন নাহার জানান, ১৫ আগস্ট রাতে কর কমিশনার দুজন সাংবাদিক নেতাকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ থানায় অবস্থান করেন। কিন্তু পুলিশের অনমনীয় ভূমিকার কারণে কর কমিশনার ভোর ৪টার দিকে থানা ত্যাগ করেন।

একইভাবে সরকারি গাড়ি নিয়ে সুশান্ত কুমার রায় খুলনা সদর হাসপাতালের ওসিসি ভেতরে গিয়ে বাদীর সঙ্গে দেখা করেন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতিবাদে তিনি সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হন।

১৬ আগস্ট খুলনার অভিজাত হোটেল সিটি ইনে শিঞ্জন রায়ের বৌভাত অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু অনুষ্ঠানে শিঞ্জন রায় উপস্থিত ছিলেন না। আগত অতিথিদের জানানো হয়, শিঞ্জন রায় একটু বাইরে রয়েছেন। অথচ সে সময় শিঞ্জন সোনাডাঙ্গা থানা হাজতে ছিলেন।