জাহালম কাণ্ডে জড়িত দুদকের ১১ কর্মকর্তা সম্পর্কে জানতে চান হাইকোর্ট
বিনা দোষে জাহালমের জেল খাটার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হচ্ছে মর্মে প্রতিবেদন গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট। প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের নাম এবং কার কী দোষ তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় হাইকোর্ট দুদককে পুনরায় প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৮ আগস্ট এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আজ বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান, ব্রাক ব্যাংকের পক্ষে আসাদুজ্জামান শুনানি করেন।
আজ দুপুর ২টার পর দুদকের প্রতিবেদনের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান দুদকের প্রতিবেদন পেশ করে বলেন, জাহালমকে ভুল আসামি করা ৩৩ মামলাই পুনরায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে। প্রতিবেদন পেশ করার পর আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ রিপোর্ট ভাসাভাসা রিপোর্ট। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। আপনারা প্রতিবেদনে বলেছেন ১১ জন দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কিন্তু ১১ জন কর্মকর্তা কারা। তাদের নাম নেই কেন? কোন কর্মকর্মকর্তার কী দোষ, সুনির্দিষ্টভাবে ভাবে তা উল্লেখ নেই কেন? আমরা এ রিপোর্ট গ্রহণ করলাম না। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করে আগামী ২৮ আগস্ট দাখিল করবেন।’
এর আগে দুদকের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) জালাল সাইফুর রহমানের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাহালমকে ভুল আসামি করা ৩৩ মামলাই পুনরায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে।
আদালতের আদেশে গঠিত দুদকের তদন্ত কমিটি গত ১১ জুলাই একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। সেখানে বিনা দোষে জাহালমের জেল খাটার বিষয়ে দুদক, মামলার পিপিসহ সব পক্ষের দায় ও সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে আদালত দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দেন।
গত ২৭ জুন আদালত জাহালমের ঘটনায় দুদকের দায় আছে কি না, তা নির্ণয় করে গঠিত কমিটিকে ১১ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, একটি জাতীয় দৈনিকে “৩৩ মামলায় ‘ভুল আসামি জেলে’‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’” শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ডুমুরিয়া গ্রামের জাহালম ‘ভুল আসামি’ হয়ে বিনা দোষে তিন বছর জেল খাটার ঘটনায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত।
ওই প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের পর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৩৩ মামলার মধ্যে মোট ২৬টিতে ‘ভুল’ আসামি হয়ে জেল খাটার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও মামলার বাদীসহ চারজনের ব্যাখ্যা শোনেন আদালত। এরপর জাহালমকে ২৬ মামলায় জামিন দেন হাইকোর্ট।