রোহিঙ্গা প্লাবনের দুই বছরের খতিয়ান

Looks like you've blocked notifications!

দুই বছর আগে এই আগস্ট মাসেই সেনাবাহিনীর হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেয়। এ ঘটনাকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধন’ বলে উল্লেখ করে।

মাতৃভূমি থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো একনজরে তুলে ধরা হলো :

২৫ আগস্ট, ২০১৭ : আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামের বিদ্রোহীরা রাখাইন রাজ্যের ৩০টি পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে একযোগে হামলা চালায়। এতে ১২ নিরাপত্তাকর্মী ও ৮০ বিদ্রোহী নিহত হন।

২৬ আগস্ট, ২০১৭ : আরসার বিদ্রোহী ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিন হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদ পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়।

সেপ্টেম্বর, ২০১৭ : সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২৫ আগস্ট হামলার পর এক সপ্তাহে মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাংশের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে দুই হাজার ৬০০ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।

১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ : জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে উল্লেখ করেন।

১০ অক্টোবর, ২০১৭ : মিয়ানমারের নেত্রী নোবেলজয়ী অং সান সু চি ইয়াঙ্গুনের একটি স্টেডিয়ামে আন্তঃধর্মীয় প্রার্থনায় যোগ দেন। একই দিন জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার বরাত দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানায়, এরই মধ্যে ১১ হাজার রোহিঙ্গা তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে দেশান্তরি হয়েছে।

১২ অক্টোবর, ২০১৭ : মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ বা সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্কট মার্সিয়েল। বৈঠকে সেনাপ্রধান জানান, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়।

১৩ অক্টোবর, ২০১৭ : মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, পাল্টা লড়াইয়ের সময় সেনাদের আচরণ, যার কারণে রোহিঙ্গারা বাস্তুচ্যুত হয়, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তারা তদন্ত শুরু করেছে।

নভেম্বর, ২০১৭ : রাখাইনে সেনা অভিযানের পর প্রথম সফরে অং সান সু চি ‘ঝগড়া-বিবাদ’ না করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

২৭ নভেম্বর- ডিসেম্বর, ২০১৭ : রোহিঙ্গা ইস্যু সামনে রেখে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করেন। তবে পোপ মিয়ানমার সফরের সময় ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। যদিও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপের সময় তিনি সেটি ব্যবহার করেন।

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ : পুলিশ সদস্যের আমন্ত্রণে রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সো ও (২৮) ইয়াঙ্গুনের একটি রেস্তোরাঁয়া যান। সেখান থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময়ে তাঁরা রাখাইনের ইন দিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনাটি অনুসন্ধান করছিলেন।

১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ : মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রাখাইনের ইন দিন গ্রামে এক গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

২১ ডিসেম্বর, ২০১৭ : রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে ‘মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ কারণে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ ১৩ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।    

১০ জানুয়ারি, ২০১৮ : অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের আওতায় (রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার আইন) রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ আনা হয়। এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল হতে পারে। একই দিন মিয়ানমার সেনা কর্তৃপক্ষ জানায়, রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সেনাসদস্যরা ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে। এদের দেহ পরে একটি গণকবরে পাওয়া যায়। 

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণ করে জানায়, সেনা অভিযানের সময় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অন্তত ৫৫টি গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

১২ মার্চ, ২০১৮ : অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, একসময় যেখানে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ও মসজিদ ছিল, সেখানে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে।

১১ এপ্রিল, ২০১৮ : রাখাইনের ইন দিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার দায়ে সাত সেনাসদস্যকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

৩০ জুলাই, ২০১৮ : রাখাইনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা খতিয়ে দেখতে মিয়ানমার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে।

সেপ্টেম্বর, ২০১৮ : রয়টার্সের দুই সাংবাদিক অভিযুক্ত, তাঁদের প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেন মিয়ানমারের একটি আদালত।

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ : ভিয়েতনামের হ্যানয়ে আসিয়ানের একটি সম্মেলনে অং সান সু চি বলেন, তাঁর সরকার রাখাইন পরিস্থিতিকে আরো ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারত।

১৫ নভেম্বর, ২০১৮ : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের শারণার্থী শিবিরগুলোতে বিক্ষোভ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা কেউ রাখাইনে ফিরতে চায় না।

জানুয়ারি, ২০১৯ : মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে দ্য রাখাইন ন্যাশনালিস্ট আরাকান আর্মির বিদ্রোহীরা চারটি পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালায়। এতে ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত ও নয়জন আহত হন।

১৮ মার্চ, ২০১৯ : মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৭ সালের রাখাইন অভিযানের ব্যাপারে তদন্তের জন্য তারা সামরিক আদালত গঠন করবে।

৭ মে, ২০১৯ : মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের ক্ষমায় মুক্তি পান কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রয়টার্সের দুই সাংবাদিক।

২৭ মে, ২০১৯ : মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, ইন দিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত সাত সেনাসদস্য খুব শিগগির মুক্তি পেতে যাচ্ছেন।

২২ জুন, ২০১৯ : মিয়ানমারের সরকার দেশটির টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয়, সংঘাতপ্রবণ এলাকার ইন্টারনেট সেবা যেন বন্ধ রাখা হয়। অপারেটর টেলিনর জানায়, এসব এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করছিল।

২০ আগস্ট, ২০১৯ : বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নতুন করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।