প্রধানমন্ত্রীকে ‘ঘরকাটা ইন্দুর’ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে : ইনু
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘরকাটা ইঁদুর সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেছেন, ‘আপনজনদের সম্পর্কেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যদি না করেন তাহলে আবার দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।’
আজ রোববার রাজধানীতে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় হাসানুল হক ইনু এ কথা বলেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট শাহবাগ থানা শাখা ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কয়েক বছরে ধরে, রেডিও- টেলিভিশনে বলে আসছেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারি না, বঙ্গবন্ধুর ঘরের আপনজনরাই আমার পিতাকে কীভাবে হত্যা করেছে।’ এ আপনজন কারা? শেখ হাসিনা বলেছেন, এ আপজনরা, বউ-বাচ্চারা দিনরাতে, রাতের ১০টা পর্যন্ত আপনার ৩২ নম্বর বাড়িতে থাকত-খাইত। এদের রান্নাবান্না করে খাওয়াইছেন। ডালিমের স্ত্রী, হারুন, রশীদ, নূর- সবাই শেখ কামালের বন্ধু ছিল। এটাও শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা, আমার ঘরের আপনজনরা কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, কীভাবে তারা পারল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে, কীভাবে তারা পারল এ ঘটনাটা ঘটাতে?’ শেখ হাসিনা এটাও বলছেন, শেখ কামালের বিবাহতে খন্দকার মোস্তাকই উকিল বাবা ছিলেন, আওয়ামী লীগের এত নেতা থাকতেও খন্দকার মোস্তাককেই বেছে নিয়েছেন, এতটুকু ভরসা ছিল।”
জাসদ সভাপতি বলেন, “শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা যখন প্রবাসে হত্যার কথা শুনেন, প্রথম মন্তব্য করেছেন, ‘মোস্তাক চাচাকে বল, আমাদের রক্ষা করতে।’ উনি (শেখ হাসিনা) তখন জানতেন না, মোস্তাক তখন রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতি। আমি কথাগুলো কেন বলছি? বলছি, এজন্যে যে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র, সরকার এমন কী উনার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক শত্রুও ছিল, পাকিস্তানিরা ছিল, রাজাকারেরা ছিল, আততায়ী চক্ররা ছিল, কিন্তু খুন করেছে আপনজনরা।”
সাবেক তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমি বলব, বাংলাদেশের শত্রু, মুক্তিযুদ্ধের শত্রু, শহীদদের শত্রু আছে, বঙ্গবন্ধুর শত্রু হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জঙ্গি। আমরা সবাই এজন্য সতর্কতা অবলম্বন করে থাকি। কিন্তু ১৫ আগস্টের ঘটনা যদি মনে রাখি শুধু বিএনপি-জামায়াত জোটের ব্যাপারে সতর্ক থাকলেই হবে না, তাদের ধ্বংস দমন করলেই হবে না, পাশাপাশি আপনজনদের সম্পর্কেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যদি না করি, তাহলে আবার দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। তাহলে আমি এ কথাটা কেন বললাম? এজন্যই বললাম, ১৫ আগস্ট আলোচনা সভা করছি। এ এক মাসে বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিরা রাজনৈতিক কিছু মোল্লারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার নিন্দা করে একটা বিবৃতি দেয় নাই। তাই আমরা দুঃখিত, যে বিচার কার্য বাকি আছে সেটুকু শেষ করেন।’
‘আমরা সমর্থন করি, আমাদের সমর্থন আছে, আমরা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করি। জাতির পিতার হত্যাকারী মানেই, আমরা তাদের ঘৃণা করি। যেহেতু বিবৃতি দেয়নি সেহেতু আমরা মনে করি বিএনপি-জামায়াত জঙ্গি জোট এখনো বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে আছে, বিপজ্জনক হয়ে আছে। বাংলাদেশ এখনো নিরাপদ না, ষড়যন্ত্র জাল বুনা হচ্ছে। যেহেতু চক্রান্তের জাল আছে, সেহেতু আমি বলছি ঘরের দিকে একটু তাকান। আপনজনরা যেন আবার চক্রান্ত না করতে পারে। ১৫ আগস্টের ঘরের ভেতরের আপনজনরা ঘরেথাকা ইন্দুর হয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। ঘরকাটা ইন্দুর সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজটা তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে শেষ করে দেওয়া হয়েছে।’ বলছিলেন হাসানুল হক ইনু।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সহসভাপতি সাংবাদিক রেদোয়ান খন্দকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম প্রমুখ।