ভৈরবে চার হাজার শিক্ষার্থীর মুজিব সমাবেশ

Looks like you've blocked notifications!

'জাতীয় পতাকা হাতে স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই মুজিব' এ প্রত্যয়ে সোমবার কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অনুষ্ঠিত হয়েছে 'মুজিব সমাবেশ'। শহীদ আইভি রহমান পৌর স্টেডিয়ামে উপজেলার ১২২টি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চার হাজার শিক্ষার্থী ওই সমাবেশে অংশ নেয়। তারা প্রত্যেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদলে সাদা পায়জামা, পাঞ্জাবি, মুজিবকোর্ট ও কালো ফ্রেমের চশমা পড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে হাজার বছরের এ শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে স্মরণ করে।   

মুজিব শতবর্ষ পালনের প্রতি বিনম্রশ্রদ্ধায় চেতনায় মুজিব, ধারণায় মুজিব- এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, নৈতিকতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সদা জাগ্রত রাখতেই উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন এই সমাবেশের আয়োজন করে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদমীন। অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ প্রধান অতিথি হিসেবে সমাবেশের উদ্বোধনী ঘোষণা করেন। এ সময় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভৈরব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. সায়দুল্লাহ মিয়া।

বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের একান্ত সচিব মো. সাখাওয়াত উল্লাহ। অতিথি ছিলেন পৌর মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা ফখরুল আলম আক্কাছ, জেলা পরিষদের প্যানেল-চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মির্জা মো. সুলায়মান, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ারা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম সেন্টু, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিসুজ্জামান, ভৈরব প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. জাকির হোসেন কাজল, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম বাকী বিল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ।

প্রধান অতিথি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে নতুন প্রজন্মের বুকে লালন করতে আজকের এই মুজিব সমাবেশ। বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টে পরিবারসহ নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আজো বেঁচে আছেন মানুষের হৃদয়ে। একাত্তরের রাজাকার ঘাতকদের ফাঁসি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। দেশে বৈদেশিক রপ্তানি বেড়েছে। নারী অধিকার বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সায়দুল্লাহ মিয়া বলেন, এ ধরনের সমাবেশ সারা বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে দিতে পারলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানান যেন সারা বাংলাদেশে প্রতিটি স্কুল কলেজে মুজিব সমাবেশ করার নির্দেশ প্রদান করেন।

ইউএনও ইসরাত সাদমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই মুজিব সমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, ডেপুটি কমান্ডার ফরহাদ আহমেদ, ভৈরব চেম্বারের সভাপতি আলহাজ মো. হুমায়ুন কবীর, দৈনিক গৃহকোণ সম্পাদক এমএ লতিফ, হাজী আসমত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আরবুজ্জামান আপন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জলি বদন তৈয়বা প্রমুখ।

মুজিব সমাবেশের শুরুতে পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত। ভৈরব সরকারি কেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। পরে কেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তুলন আহমেদ ও কমলপুর জনাব আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফসা বিনতে রশিদ ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পাঠ করে উপস্থিত সবাইকে বিমোহিত করে তুলে। এরপর উস্তাদ ইসরাইল খান সংগীত নিকেতন ও শারফিন আহমেদ সংগীত একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধর গান। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী ফারহানা বেগম লিপি ও আতিক আহমেদ সৌরভ।

মুজিব সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ক্ষুদে মুজিবদের শৃঙ্খলা ও সদাচরণ বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে কমলপুর মোজাফফর বেপারী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভৈরব আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জব্বার জুট মিলস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক পর্যায়ে কমলপুর হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, ভৈরব সরকারি কেবি পাইলট মডেল হাই স্কুল, আলফাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে জিল্লুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভৈরব সরকারি টেকনিক্যাল কলেজ, শহিদুল্লাহ কায়সার কলেজ, ইসলামপুর (কালীপুর) ফাজিল মাদ্রাসা, কেরামত আলী আলিম মাদ্রাসা ও আদর্শ দাখিল মাদ্রাসাকে পুরস্কৃত করা হয়। সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের মূল্যায়ন কমিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব নির্বাচিত করেন।

পরে দুপুরে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে 'চেতনায় মুজিব' নামে একটি জাদুঘরের উদ্বোধন করেন অতিথিরা। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটিতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় ছবির মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধান সেনাপতি  এমএজি ওসমানী, বঙ্গবন্ধুর সহচর, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, ২০০৪ সালে ঢাকায় গ্রেনেড হামলায় শহীদ বেগম আইভি রহমানসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজরিত বিভিন্ন ছবি রাখা হয়েছে। উদ্বোধন শেষে তারা জাদুঘরে রক্ষিত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন দ্রব্য, ছবি ইত্যাদি ঘুরে ঘুরে দেখেন। নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানানোই এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বলে জানান উদ্যোক্তা ইউএনও ইসরাত সাদমীন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মো. সায়দুল্লাহ মিয়া জানান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে স্মৃতিময় করে রাখতে স্মৃতিবিজরিত বিভিন্ন ছবি ও দ্রব্য এই জাদুঘরে রাখা হবে। তিনি এ সময় নিজেদের সংগ্রহে থাকা এইসব এই জাদুঘরে জমা রাখার জন্য অাহ্বান জানান।