অন্ধ লোকমানের কাছে হার মেনেছে সব কাজ

Looks like you've blocked notifications!

জন্মের দুই বছর পর দৃষ্টি হারিয়েছেন লোকমান। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি তাঁর অদম্য পথচলা। সব প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে হার না মেনে সামনে এগিয়ে গিয়ে জয় করতে চান প্রতিটি কাজ। দৃষ্টিশক্তিসম্পন্নরা যা করতে পারেন না, সেসব কাজ খুব অনায়াসেই করতে পারেন লোকমান। যা দেখে প্রতিবেশীরাও অবাক হয়ে যান।

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাজিডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা লোকমান। আবদুল কাদেরের চার সন্তানের মধ্যে সবার বড় তিনি। বয়স ৪৮ পেরিয়ে গেলেও দৃষ্টিহীন লোকমান প্রতিদিন বড় বড় গাছ কাটা, নারিকেলপাড়া, মাছ ধরা, আখ কাটাসহ যেকোনো কঠিন কাজ করতে পারেন।

লোকমানের পরিবারে স্ত্রীসহ পাঁচ বছরের এক মেয়েসন্তান রয়েছে। মনের মধ্যে জমানো অদম্য প্রতিভা, মনোবল ও আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে অন্যের মুখাপেক্ষি না থেকে খেটে অর্থ উপার্জন করেন লোকমান। এ থেকেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলে তাঁর জীবন।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হাজিডাঙ্গী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির পাশের বড় একটি কড়ইগাছে উঠে সাবলীলভাবে গাছ কাটছেন লোকমান।

লোকমানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই চোখের দৃষ্টি না থাকা সত্ত্বেও যেকোনো কঠিন কাজই হোক না কেন, খুব সহজেই নিখুঁত ও দক্ষতার সঙ্গে করতে পারেন তিনি। লোকমান জানান, মনোবলের কারণেই তিনি এসব কাজ করতে পারেন। আর এ মনের জোর দিয়েই তিনি এগিয়ে যেতে চান জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।

এ সময় লোকমানের সঙ্গে গাছ কাটতে থাকা অপর দুই সহযোগী ইসমাইল ও রাকিব জানান, লোকমান চোখে না দেখলেও বড় বড় গাছে উঠে কাটাসহ যেকোনো ধরনের কঠিন কাজ সাবলীলভাবে করতে পারেন। যা একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, তা তিনি করতে পারেন।

লোকমানের মা ছালেহা বেগম বলেন, ‘জন্মের দুই বছর পর থেকেই বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার কারণে লোকমানের দুটি চোখ সম্পূর্ণভাবে অন্ধ হয়ে যায়। তবুও আল্লাহর রহমতে লোকমান যেকোনো ধরনের কঠিন কাজ সাবলীলভাবে করতে পারে।’

ছালেহা বেগম আরো বলেন, ‘আমরা তো গরিব মানুষ। টাকার অভাবে ছেলের চোখের চিকিৎসা করাতে পারছি না। চিকিৎসা করাতে পারলে ওর চোখ দুটো ভালো হয়ে যেত বলে ডাক্তাররা বলেছেন আমাকে। কিন্তু চোখের অপারেশন করার মতো এত টাকা তো আমাদের নেই।’

চরভদ্রাসনের সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ জি এম বাদল আমিন জানান, লোকমান অত্যন্ত প্রতিভাবান ও কর্মঠ একজন মানুষ। প্রতিভা আর বুদ্ধির জোরে দুই চোখ অন্ধ হয়েও যেকোনো কাজ খুব দক্ষতার সঙ্গে করতে পারেন তিনি।

অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও লোকমানের এমন কাজে হতবাক এলাকাবাসীসহ অনেক মানুষ। তাঁর এ মনোবলের প্রশংসা করে একটি উদাহরণ হিসেবেই দেখছেন অনেকে।