বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক বার্তা
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনার পর সারা দেশের পুলিশের সব ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। আজ রোববার পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও কয়েকটি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনাকে পুলিশ বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছে না। এটাকে বড় কোনো হামলার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবেও দেখছে পুলিশ। সে অনুযায়ী পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থান নিয়েছে। ক্ষোভ বা রাগ থেকে পুলিশের ওপর এই হামলা বলেও মনে করছেন অনেকে।
পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, আজ থেকেই ঢাকা মহানগরীতে স্থায়ী চেকপোস্ট প্রথা থাকছে না। ফুট পেট্রোলও (হেঁটে ডিউটি) থাকছে না। ফুট পেট্রোল টিমের সদস্যরা এখন থেকে গাড়ি নিয়ে টহলে থাকবেন। এসবের কারণ হিসেবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী হামলা করলে কাছে গাড়ি থাকলে কিছুটা নিরাপদ। কেউ হামলায় আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার জন্যও গাড়ির প্রয়োজন হয়। কিন্তু একজন পুলিশের কাছে গাড়ি না থাকলে ঝামেলা আরো বাড়তে পারে। তাই এই ব্যবস্থা।
পুলিশের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘লিখিতভাবে পুলিশের উদ্দেশে কোনো নির্দেশনা জারি করেনি পুলিশ সদর দপ্তর। তবে গতকাল রাতে আইজিপি স্যার বলেছিলেন, এই ঘটনার পর পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’
এসব ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সতর্ক অবস্থানে থাকার জন্য আমরা নির্দেশনা পেয়েছি। সব কিছুতেই সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। যেমন, ফুট পেট্রোল থাকছে না। ফুট পেট্রোল টিমের সদস্যরা এখন থেকে গাড়ি নিয়ে টহলে থাকবেন। স্থায়ী চেকপোস্ট থাকছে না। অস্থায়ী চেকপোস্ট থাকছে, তবে পুলিশের গাড়ি থাকবে সঙ্গে। গতকাল রাতেই আমরা এই নির্দেশনা পেয়েছি। তবে লিখিতভাবে এখনো নির্দেশনা পাইনি।
ঢাকার বাইরে অর্থাৎ জেলাগুলোতে সতর্কতা নিয়ে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে তিন জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছে এনটিভি অনলাইন। তাঁরা সবাই সতর্কতা নিয়ে এই নির্দেশনার কথা স্বীকার করেছেন।
এদের ভেতরে সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোস্তাফিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা নির্দেশনা পেয়েছি। যদিও আগে থেকেই পুলিশ এসব বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে। গতকাল ঢাকার সায়েন্স ল্যাবে পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনাকে পুলিশ বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছে না। দেখার সুযোগও নেই। এটা টার্গেট করে হামলার ঘটনা। তাই সতর্ক অবস্থানে পুলিশ। এসব নির্দেশনা আমি জেলার সব পর্যায়ে জানিয়ে দিয়েছি। রাস্তায় তল্লাশি বাড়ানোর জন্য বলেছি। কাউকে সন্দেহ হলে তাকে মনিটরিং করা এবং তল্লাশি করার কথাও বলেছি। সব মিলিয়ে পুলিশ এখন অনেক সতর্ক।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক জেলার পুলিশ সুপার বলেছেন, সন্দেহপ্রবণ এলাকায় ব্লক রেইড চালাতে বলা হয়েছে। সন্দেহ হলেই যত্রতত্র তল্লাশি করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সব সময় সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর মিরপুর রোডের সায়েন্স ল্যাব মোড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় সেখানে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের নিরাপত্তা দলের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহাবুদ্দিন ও দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ঘটনা নিয়ে আজ ডিএমপি সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, ‘শনিবার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে মূলত পুলিশকে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়। ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে (অন্য পাশে) রাস্তা যখন ফাঁকা ছিল তখন বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।’ তিনি আরো বলেন, হামলার ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, এলজিআরডিমন্ত্রী তাজুল ইসলামের নিরাপত্তায় থাকা এএসআই শাহাবুদ্দিন ও ট্রাফিক কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম সে সময় রাস্তায় ছিলেন। মনে হচ্ছে হামলার মূল লক্ষ্য ছিল পুলিশ সদস্য।
আছাদুজ্জামান মিয়া দাবি করেন যে সায়েন্স ল্যাবে হামলার সঙ্গে গুলশানের ট্রাফিক পুলিশ এবং মালিবাগে পুলিশের গাড়িতে হামলা, পল্টন পুলিশ ব্ক্স এবং খামারবাড়ি পুলিশ বক্সের কাছ থেকে বোমা উদ্ধারের ঘটনার মিল রয়েছে।
জঙ্গিগোষ্ঠী আগের হামলাগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিল উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
সব হামলার দায় স্বীকার করে ওয়েব সাইটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর দেওয়া পোস্ট সম্পর্কে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা এখন বৈশ্বিক সমস্যা। যারা হামলার দাবি করেছে সেগুলো সত্য নাকি মিথ্যা আমরা তা জানার চেষ্টা করছি।’