নওগাঁয় পাসপোর্ট অফিসের অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ পায়নি ১৩ জন

Looks like you've blocked notifications!

নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার পৌর এলাকার চকপাথুরিয়া মৌজায় ২৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তার প্রকৃত মালিক ২৫ জন হলেও সরকার নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের নায্য পাওনা থেকে ৬ নারীসহ ১৩ জনকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের যাঁরা সন্তুষ্ট করতে পেরেছে শুধু তাঁদের নামেই গত ১৮ আগস্ট ক্ষতিপূরণের পুরো অর্থ বাবদ প্রায় দুই কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এই ঘটনায় গত ২২ আগস্ট বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে রতন হোসেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে অভিযোগকারীসহ বঞ্চিতদের কাউকে সংশ্লিষ্ট অফিসে ডাকা হয়নি বলে জানিয়েছেন রতন হোসেন।

জেলা প্রশাসককে দেওয়া অভিযোগ ও মামলার সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ সদরের চকপাথুরিয়া মৌজায় ওই জমির ক্রয়সূত্রে মালিক ছিলেন একই জেলা সদরের কোমাইগাড়ি গ্রামের রহিম উদ্দিন মণ্ডল। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে ওই জমির মালিক হন।

আরএস খতিয়ানে রহিম উদ্দিনের স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ের নাম উল্লেখ থাকার কথা। কিন্তু সেটেলমেন্ট দপ্তরের ভুলে আরএস খতিয়ানে রহিম উদ্দিনের শুধু দুই ছেলে আমির উদ্দিন মণ্ডল ও আব্দুর রাজ্জাকের নাম প্রকাশ পায়। বিষয়টি জানার পর ২০১১ সালে নওগাঁ প্রথম সাব জজ আদালতে বাটোয়ারা মামলা করা হয়। মামলায় মৃত রহিম উদ্দিনের একমাত্র জীবিত মেয়ে লাইলী বেগম ও তাঁর মৃত দুই ভাইবোনের ১২ সন্তান পক্ষভুক্ত হন।

ওই মামলার বাদীপক্ষের একজন লাইলী বেগম জানান, স্থানীয় ভূমি অধিগ্রহণ অফিস থেকে চকপাথুরিয়া মৌজার সেই ২৫ শতক জমি অধিগ্রহণের কথা জানিয়ে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি প্রথম নোটিশ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে একই বছরের ৬ জুন এবং ১১ জুলাই আরো দুটি নোটিশ দেওয়া হয়। তখন লাইলীসহ ১৩ জন ওয়ারিশ ওই জমি নিয়ে আদালতে বাটোয়ারা মামলা চলমান থাকার কথা জানিয়ে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে চিঠি দেন। তাতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অধিগ্রহণ করা ওই জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ কাউকে পরিশোধ না করার অনুরোধ জানানো হয়।

ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা জয়া মারিয়া পেরেরা কয়েক দফা শুনানি করেন। ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা  জানান, বাটোয়ারা মামলা নিষ্পত্তি কিংবা বাদী-বিবাদীপক্ষের মধ্যে আপস মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ওই জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ কাউকে দেওয়া হবে না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদে পদোন্নতি পেয়ে বদলি হয়ে যান। যোবায়ের হোসেন নামের এক কর্মকর্তা তার স্থলাভিষিক্ত হন।

ভুক্তভোগী লাইলী বেগমের অভিযোগ, যোবায়ের হোসেন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেওয়ার পর তাঁকেও অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত জমি নিয়ে বাটোয়ারা মামলা বিদ্যমান থাকার কথা জানিয়ে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তিনি তা আমলে না নিয়ে বরং তড়িঘড়ি করে গত ১৮ আগস্ট একপক্ষের হাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোট ৯২ লাখ ৭২ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।

লাইলী বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ‘যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, পৈতৃক সূত্রে আমরা তার মালিক। সম্পত্তির মালিকানার ক্ষেত্রে নারীদের যাতে বঞ্চিত করা না হয় সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।’

ওই ঘটনায় গত ২২ আগস্ট তাঁর ভাতিজা রতন হোসেন নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন জানিয়ে লাইলী বেগম বলেন, ‘আশা করি এ ব্যাপারে তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যথায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করা হবে।’

এ ব্যাপারে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, ‘সঠিক নিয়ম মেনেই এবং আদালতের জিপির মতামত নিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। এর পরও বাদীপক্ষরা যদি আদালতে মামলা করে রায় নিয়ে আসতে পারে। তখন পরিশোধিত অর্থ ফেরত এনে তাঁদের মধ্যে বণ্ঠন করা হবে।’

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’