তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা : চার বছরেও শেষ হয়নি বিচার

Looks like you've blocked notifications!

পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলার  ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চার বছরেও শেষ হয়নি বিচার। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর আশুরার রাতে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলায় কেঁপে উঠে শিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় তীর্থস্থান হোসেনি দালান ইমামবাড়া। এই ঘটনায় নিহত হন দুজন। আহত হন শতাধিক মানুষ।

বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মামলায় ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামীকাল এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন নির্ধারিত রয়েছে।’   

ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘এ মামলায়  হাফেজ আহসান উল্লাহ মাসুদ,  শাহ জালাল, ওমর ফারুক ও চান মিয়া জামিনে রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরা কোনো সাক্ষ্য দেননি ও আসামিরা ১৬৪ ধারায় কোনো জবানবন্দিতে তাদের নাম বলেনি। তাই বিচারক তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেছেন।’

ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা আশাবাদী আসামিরা মামলা থেকে খালাস পাবে।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এ মামলায় ১১ জন সাক্ষ্য দিয়েছে। এ মামলায় আগামীকাল সোমবার ধার্য তারিখ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আদালতে আসার আগে এ মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন ছিল।’ এ আদালতে আসার পরে বিচারকাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এ মামলার বিলম্বের মূল কারণ আসামিপক্ষের কারণে। কেননা পুলিশ যখন অভিযোগপত্র দেয় তখন জাহিদ হাসান রানা নামের এক আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়। তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর। আসামিপক্ষের কৌঁসুলি আদালতের নজরে আনলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই তিন বছর সময় লেগে যায়।’ তবে খুব দ্রুত এ মামলার বিচার শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি।

এর আগে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক শফিউদ্দিন শেখ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ১০ সদস্যকে আসামি করা হয়।

অভিযোগপত্রে করা আসামিরা হলেন, কবির হোসেন, মাসুদ রানা, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাসুদ, আবু সাঈদ সোলেমান, শাহ জালাল, ওমর ফারুক, চান মিয়া, রুবেল, আরমান ও জাহিদ হাসান।

আদালত সূত্রে জানা যায়, হোসেনি দালানে বোমা হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে জেএমবি ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল গোয়েন্দারা। এর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান তিনজন।  তাঁরা হলেন- শাহাদাত ওরফে আলবানি ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা, আব্দুল্লুাহ বাকি ওরফে আলাউদ্দিন ওরফে নোমান, সাঈদ ওরফে হিরন ওরফে কামাল।

এ ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে জাহিদ হাসান, আরমান, রুবেল ইসলাম ও কবির হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

প্রত্যদর্শীরা জানিয়েছিলেন, রাত দেড়টা থেকে হোসেনি দালানের ফটকে একটি তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। মিছিলটি পল্টনে যাওয়ার কথা ছিল। মিছিলে যোগ দিতে এসেছিলেন তরুণ, বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা। এর মধ্যেই রাত পৌনে ২টার দিকে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা।

কারো কারো মতে, পরপর ১০-১৫টি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছে তারা। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে অনেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কেউবা দৌড় দিতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পায়ের তলায় পড়েছে। কান্না-চিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। আশপাশের বাসিন্দারা যে যেভাবে পেয়েছে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ভ্যান, লেগুনায় আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল ও আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়।

২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর ওই বোমা হামলার ঘটনায় চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জালাল উদ্দিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এ মামলা করেন।