ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ডালিয়া

তৃণমূলের মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, উৎসাহ দিচ্ছে

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর। তৃণমূল পর্যায়ের প্রত্যক্ষ ভোটে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল এবার শীর্ষ নেতৃত্ব বেছে নেবে। সেখানে সভাপতি পদে লড়ছেন আটজন। সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জন। ওই ২৭ জনের মধ্যে একজন হচ্ছেন নারী। তিনি ডালিয়া রহমান। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন তিনি।

ডালিয়া ছাত্রদলের সাবেক সহবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক। ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পরে তা ছেড়ে দেন। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি (অনার্স) করেন ২০১৫ সালে। এখন পড়ছেন এলএলএমে।  

ভোটের জন্য প্রচারে ব্যস্ত ডালিয়া। যাচ্ছেন বিভিন্ন জেলায়। এই ব্যস্ততারই এক ফাঁকে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। ছাত্ররাজনীতি, নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের অভিজ্ঞতা আর ছাত্রদল নিয়ে কথা বলেছেন ডালিয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের সিনিয়র করেসপনডেন্ট জাকের হোসেন।   

এনটিভি অনলাইন : ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য আপনি একমাত্র নারী প্রার্থী। সাধারণ সম্পাদক পদে লড়তে উৎসাহ কীভাবে পেলেন? 

ডালিয়া রহমান : আমি রাজনৈতিক পরিবারে বড় হয়েছি। ছোট বেলা থেকে ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে দেখে আসছি। তিনি আমার রাজনীতিতে উৎসাহের বড় কারণ। মরহুম জিয়ার আদর্শকে আমি মনে প্রাণে ভালোবাসি এবং লালন করি।  তারেক রহমান আমাদের প্রেরণা।    

এনটিভি অনলাইন : বিএনপি বহু বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলও এক অর্থে কোনঠাসা। এ রকম অবস্থায় আপনি কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

ডালিয়া রহমান : আমার বাবা বলতেন রাজনীতি যদি করো বিরোধীদল থেকে শুরু করো। ২০০৬ সালে আমি যখন কুমিল্লার বড়ুরা শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি তখন ওই কলেজের ছাত্রদলের সভাপতি ছিল আমার বড় ভাই। তাঁর মাধ্যমে ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করি। এরপর ২০০৯ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স পড়ার সময় দেখি আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক পড়েছে। কারণ তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। ছাত্রদলের অনেকে যোগদান করছে ছাত্রলীগে। আমাকে বিভিন্ন রকমের হয়রানি করছে। তখন ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ঢাকায় ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে এলএলবিতে ভর্তি হয়ে যাই। পরে ২০১২ সালে আমি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করি। ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক  ছিলাম। পরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহবেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়  বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করি (সদ্য বিলুপ্ত)।  

এনটিভি অনলাইন : প্রচারের জন্য সারা দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে?

ডালিয়া রহমান : এত বেশি সাড়া পাচ্ছি যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। অনেক আবেগ অনূভূতি প্রকাশ করা যাবে না। তৃণমূলের মানুষ, সিনিয়র নেতারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সবাই উৎসাহ দিচ্ছেন। অধিকাংশ জেলায় দেখা গেছে ছাত্রদলের অনেক ভাই এবং বোন এসে বলছে আপা আপনাকে আমার মা-বাবা দেখতে চায়। আমাদের বাড়িতে একটু যাবেন। আমি কাউন্সেলিং করে তাদের সাথে দেখা করেছি। আমাকে জড়ায়ে ধরে অনেকে এমন আবেগ অনূভূতি প্রকাশ করেছে, যা আমি বলে আপনাকে বুঝাতে পারব না। তৃণমূলে সাধারণ মানুষ ভয়ে বলতে পারে না। কিন্তু ম্যাডাম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সবাই দোয়া করছেন। এবং  বিএনপির নেত্রীর জন্য সবাই ভালোবাসা প্রকাশ করছেন। অনেক জায়গায় আমি সন্ধ্যায় পৌঁছার কথা কিন্তু পৌঁছাতে রাত সাড়ে ৯টা লেগেছে, তবু সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করেছে। কেউ  চলে যায়নি। সবার ভালোবাসা এবং সাড়া পেয়ে আমি অভিভূত।    

এনটিভি অনলাইন : ছাত্ররাজনীতি এবং নারীদের অংশ গ্রহণের পরিবেশ নিয়ে যদি কিছু বলেন?

ডালিয়া রহমান : ছাত্র রাজনীতিতে নারীদের অংশ গ্রহণের আমার আইডল হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে লালন করি। বেগম জিয়াও আমাকে অনেক স্নেহ করেন। আমি প্রতিটি আন্দোলন, সভা সমাবেশ, মিছিল মিটিংয়ে ছিলাম। এ কারণে ম্যাডাম কোনো মিটিংয়ে আমাকে না দেখলে খোঁজ নিতেন। অসুস্থ হয়ে পড়লাম কি না? কোনো সমস্যায় পড়লাম কি না? রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য এটা আমার জন্য অনেক বড় উৎসাহ। আসন্ন কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙাভাব রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসের হল দখল করে রেখেছে। আমি বলব ভবিষ্যৎ ছাত্র রাজনীতির কথা চিন্তা করে হলেও ছাত্রলীগের উচিত ক্যাম্পাসে সহাবস্থান করা। তা নাহলে রাজনীতি একদিন হারিয়ে যাবে। আর ছাত্রলীগ একচেটিয়া দখলে থাকার কারণে ছাত্রদের অধিকার  নিয়ে কথা বলারও কেউ নেই। আমি ছাত্রলীগকে বলব বিরোধী দল না  থাকলে সরকারি দলের মূল্যায়ন থাকে না।    

এনটিভি অনলাইন : রাজনীতিতে কীভাবে আসা হলো?

ডালিয়া রহমান : আমার পরিবারে রাজনীতির চর্চা ছিল। আমার বাবা মো. খলিলুর রহমান ভূঁইয়া শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক শ্রেষ্ঠ যুবকর্মী হিসাবে প্রেসিডেন্ট পদকপ্রাপ্ত। তিনি বিএনপির রাজনীতি করতেন। তিনি প্রথম কুমিল্লার বরুড়া থানায় যুবদল প্রতিষ্ঠা করেন। আমার মা খন্দকার ফাতেমা রহমান ১৯৭০ সালে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ শাখা ছাত্র সংসদে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন থেকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নির্বাচন করেন। আমার চার ভাইয়ের সবাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

এনটিভি অনলাইন : এ পর্যায়ে আসতে আপনাকে কী কী সমস্যা পার করে আসতে হয়েছে?

ডালিয়া রহমান : একজন নারী হিসেবে এ পর্যায়ে আসতে আমি তেমন কোনো সমস্যায় পড়িনি। কেননা আওয়ামী লীগ সারা বিশ্বে প্রচার করছে বিএনপি নারীবান্ধব দল নয়; আমাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাসহ বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু আমার অংশ গ্রহণ এবং নেতৃত্বর মাধ্যমে আমি মনে করি এসব মিথ্যা প্রপাগান্ডা দূর হবে। আমি মনে করি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান আধুনিক ছাত্র রাজনীতির রূপকার। আমার বিশ্বাস আধুনিক ছাত্র রাজনীতিতে আমার নেত্বত্ব আরো ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।   

এনটিভি অনলাইন : ভবিষ্যতে রাজনীতিতে নিজেকে কোথায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা?

ডালিয়া রহমান : এখনো ভাবিনি। সময় বলে দেবে নিজেকে কোথায় নিয়ে যেতে চাই।  

এনটিভি অনলাইন : বিএনপির নেত্রীকে মুক্ত করতে বিএনপি কী ব্যর্থ বলে মনে করেন?

ডালিয়া রহমান : পুরোপুরি ব্যর্থ বললে ভুল হবে। বরং সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রিয় ষড়যন্ত্রের শিকার। রাষ্ট্রীয় বন্দুকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সবার জন্যই কঠিন। তবে তৃণমূল পর্যায়ে  কাউন্সিল করে নতুন কমিটি ঢেলে সাজালে নেতাকর্মীরা নতুন উদ্যমে রাস্তায় নেমে আসবে। হাজার হাজার ছাত্র জনতা রাস্তায় আসবে। এজন্য সঠিক নেত্বত্ব প্রয়োজন। আমার বিশ্বাস নতুন নেত্বত্ব এলে কাউন্সিল করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।  

এনটিভি অনলাইন : সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হলে আপনি ছাত্রদলকে নিয়ে কী পরিকল্পনা করবেন?     

ডালিয়া রহমান : প্রতিটি জেলায়, ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্সিল করে নতুন কমিটি করব। এ ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরাই নেতা নির্বাচন করবে। অমরা শুধু সহযোগিতা করব। আমি বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার সময় মোটরসাইকেল নিয়ে কারাগার পর্যন্ত গিয়েছি। মা’কে মুক্ত করতে আমি দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। আমি প্রতিটি মিছিল পিকেটিংয়ে অংশ নিয়েছি। আমি মেয়ে হিসেবে যদি রাস্তায় নেমে আসি তখন আমার সহপাঠী ছেলে বন্ধুরা আরো উৎসাহ পাবে। তাদের রাজপথে নামতে সাহস বেড়ে যাবে। তাই আমাদের  মা’ বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আমি সামনে থেকে নেত্বত্ব দেব। আমি কারাগার পর্যন্ত দিয়ে এসেছি; মুক্তির দিনেও আমি পাশে থাকতে চাই।   

এনটিভি অনলাইন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

ডালিয়া রহমান : আপনাকে এবং এনটিভি অনলাইন এবং পাঠকদের অনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।