জিয়াউর রহমান ও এরশাদকে রাষ্ট্রপতি বলা বৈধ নয় : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে মার্শাল ল জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল জিয়াউর রহমান। তেমনিভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল এরশাদও। হাইকোর্টের রায়ে তাদের সেই ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তাদের আর রাষ্ট্রপতি বলা যায় না।’
সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের মৃত্যুতে আজ রোববার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংসদের লিখিত শোক প্রস্তাবে এরশাদকে ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি’ ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাঁর জীবনী তুলে ধরে বলা হয়, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে দেশ একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবককে হারাল।’
আলোচনার পর এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী রেওয়াজ অনুযায়ী আগামীকাল সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংসদের বৈঠক মুলতবি করেন।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের মৃত্যুতে শোক জানান। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম, সাবেক এমএলএ অধ্যক্ষ খালেদা হাবিব, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারা বেগম, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি সাত্তার। তাঁকে প্রার্থী করার কথা এরশাদ নিজেই বিদেশি পত্রিকায় বলেছিলেন। আমরা ওই সময় প্রতিবাদ করেছি। এরশাদ ৮২ সালে যে ক্ষমতা দখল করেছিলেন সেটির সুযোগ দেন কিন্তু খালেদা জিয়া। তিনি শুধু দুটি বাড়িই নয়, ১০ লাখ টাকাও পেয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার কোনো ডায়েরিই হয়নি, তদন্তই হয়নি এখন পর্যন্ত। জিয়া হত্যার জন্য এরশাদকে দায়ী পর্যন্ত করেননি খালেদা জিয়া। আমরাই প্রতিবাদ করি। কারণ এক স্বৈরাচারের পরে আরেক স্বৈরাচার আমরা চাইনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরশাদ কিছু ভালো কাজ করেছেন এটা সত্য। তবে তার সময়ে বারবার আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি লালদীঘির ময়দানে সভা করতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। ওই সভায় গুলিতে নিহত হন দুজন। ওই বছর নির্বাচনের নামে প্রহসন করে তিনি আরো বেশি বিতর্কিত হন। তার বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি হয়। এসব কারণে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলি।’
এরশাদের আমলে আওয়ামী লীগের সংসদ নির্বাচনের অংশগ্রহণের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত চেয়েছি বলেই অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। ওই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে এ ধরনের বিতর্কিত হতে হতো না। একটি গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠিত হতো। আবার নিজেই সেই সংসদ ভেঙে দিয়ে আবার বিতর্কিত হয়ে যান। এরপর ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে কোনো দল অংশগ্রহণ করেনি। তখন আন্দোলনের মুখে তিনি ১৯৯০ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।’
শোক প্রস্তাবের বক্তব্যে রওশন এরশাদ বলেন, ‘তিনি অনেক জনদরদি নেতা ছিলেন। উনি দেশ ও জনগণের জন্য অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যে কাজ অসমাপ্ত রেখে গিয়েছিলেন, তাঁর অকাল ও মর্মান্তিক মৃত্যুতে তিনি যা শেষ করে যেতে পারেননি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন। তিনি অনেক জনপ্রিয় ছিলেন তা তাঁর মৃত্যুর পরও বোঝা গেছে।’