ছাত্রলীগ নেতা হতে লাগবে টাকা! অডিও ভাইরাল

Looks like you've blocked notifications!
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব (বাঁয়ে) ও কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন মিঞা। ছবি : সংগৃহীত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব টাকা দিয়ে নেতা হয়েছেন, ওই টাকা আগামী ছয় মাসে দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। রাকিব যাকে এই কথা বলেছেন তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন মিঞা বলে জানা গেছে।

গত ঈদুল আজহার আগে রাকিবের সঙ্গে সুমনের মুঠোফোনে কথোপকথন হয়। ওই কথোপকথনের অডিও ক্লিপ থেকে জানা যায়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) মাহমুদুল হাসান নামের ছাত্রলীগের এক কর্মীকে নেতা বানিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। মাহমুদুলকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন আথবা সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর মাধ্যমে পাবিপ্রবির নেতা বানাতে পারবে বলে জানান রাকিব। রাব্বানী তাঁকে আঞ্চলিক নেতা বানানোর দায়িত্ব দিয়েছেন বলেও মন্তব্য রয়েছে সেখানে ।

অডিও ক্লিপের কথোপকথনটি এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

সুমন : পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওই ছেলেটা, ওর বাড়ি টাঙ্গাইল।

রাকিব : নতুন এই কমিটিতে পোস্ট কী হইছে?

সুমন : কী সম্পাদক যেন! সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সেক্রেটারির সাথে ভালো সম্পর্ক, ভিসির সাথে ভালো সম্পর্ক। ঠিক আছে? তোমার মতোই ভিসির সাথে ভালো সম্পর্ক। তোমার... টাঙ্গাইলের ওই ছেলে, ওই ছেলের হচ্ছে টাকাপয়সার অভাব নাই। সেই পরিবারের ছেলে নেতা হবে। কী পলিসি খাটাব?

রাকিব : ঢাকা যায়ে খাটতে হয়। খাটতে বলতে কি, বহুত কাঁঠখড়ি আছে… তবে এখন আমার যে হিসাব-নিকাশ, রাব্বানী ভাইয়ের সাথে আমার যে সম্পর্ক, এ আঞ্চলিক যে বিষয়টা আমি যদি ভাইরে বলি, ভাই আমার কথা শুনবে। ভাই আমাকে অলরেডি বলেছে।

সুমন : বিষয়টা হচ্ছে আমি বারবারই যে কথাটা বলেছি রাব্বানীর তোমার লবিংটা মেইনটেইন করতেই হবে..

রাকিব : আমি বলি, আমি আপনারে বলি, ওরে নেতা হতে হলে, ভিসি স্যার যদি বলে তাহলে ও নেতা হতে পারবে। আর ভিসি স্যারের সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভালো। ভিসি স্যাররে আমি এখন পর্যন্ত কারো নাম বলি নাই।

সুমন : আর কথা হচ্ছে তোমার মেইনলি যে জিনিসটা দেখতে চাই। বাঁধন যেহেতু লোকাল।

রাকিব : বাঁধন যা বলবে নে তাই শুনব নে।

সুমন : ওনার সাথে ইয়ে সব তোমার ঠিকঠাক রাখা দরকার। বলিছে বিশ্ববিদ্যালয় দেখবে। এখন ধরো তোমার আমার দুইটা কাজ হচ্ছে খুব জরুরি। এখন আমার যে কারণে হয় ইয়েস অর নো নেগেটিভ ওদের তিন-চার দিনের ভিতরে তোমারও জোর আছে একটা, আমারও জোর আছে।

রাকিব : হুমম..

সুমন : ঠিক আছে? সেই ব্যাপারটা ওদের সাথে সেভাবে কথা বলা যায়। ওরা খুব নাছোড়, যে ওর কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমরা খাব। কারণ সরাসরি হচ্ছে রাব্বানী লাইনে আসুক ওই লাইনে গেলেই তোমার ধরো, তোমার ধরো এর ভিতরে যে ইনভেস্টম্যান্ট সেটাও কিন্তু তোমার থেকে যাবে।

রাকিব : এই ইনভেস্টম্যান্টটা বাদ দেন। . . .

সুমন : যোগাযোগটোগ আছে। মোটামুটি না তো মনে করো, হট সম্পর্ক হতে হবে। এখন মূলত ও যে জায়গাতে, মেইনলি বড়লোকের ছেলে তো! ঠিক আছে?

রাকিব : হুমমম

সুমন : ও এদিকে রাজনীতির সাথে হচ্ছে, কমিটিতে-টমিটিতে আছে বাদবাকি টাকাপয়সা দিয়ে হচ্ছে, ও বের হয়ে আসবে। যে কারণে এত ইয়ে করা। আমার কাছে বলছে টাকাপয়সার কোনো সমস্যা নাই। ঠিক আছে?

রাকিব : আচ্ছা! আপনে ওরে আমারে একটু ফোন দিতে বলেন, আমার নাম্বারটা দিয়ে একটু ফোন দিতে কন। আমি ওর সাথে একটু ডিরেক্ট কথা বলি...

সুমন : ও আচ্ছা.. আর এমনি আমার কাছে একটু প্রাথমিক ধারণা চাইছে। ঠিক আছে? আমার কাছে নরমালি জিজ্ঞেস করছে, হচ্ছে ফুফাতো ভাইয়ের মাধ্যমে। যে যে হচ্ছে টাকাপয়সা? আমি বললাম যে টাকাপয়সা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। টাকাপয়সার একটা ধারণা দিতে বলছে। কাজ হতে হবে, কাজ হতে হবে..।

রাকিব : হুমম.. কাজ হতে হবে।

সুমন : তোমার ইয়ে সম্পর্কে তুমি যেভাবে বলছিলে আরকি, বিভিন্নভাবে কমিটি ভাঙা, তারপর গড়া, তারপর অন্যান্য ঝামেলা, প্রিন্টট্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তোমার তো একটা বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে গেছে।

রাকিব : হুমম.. হিউজ.. হিউজ..

সুমন : সেই ফিগার তো আমি জানি, তা প্রায় মনে হয় চল্লিশের কাছে হবে..!

রাকিব : হুমম..

সুমন : এসব নিয়ে ওর হচ্ছে কোনো আপত্তি নাই, ওর কথা হচ্ছে যে কোনোভাবে হতে হবে। এখন কোন লাইনে হবে সেটা বড় কথা না, এখন করবা তুমি… হতে হবে।

রাকিব : হুম হতে হবে..

সুমন : এখন ধরো সেক্ষেত্রে তোমারও, তুমি যেহেতু খরচপত্র করি আসছ, আমি চাই তোমার এই খরচটা পূরণ হোক। ঠিক আছে?

রাকিব : না ভাই, শোনেন কোনো ছেলেরে ইয়ে করতে গেলে... । এখন আমার যা খরচ হইছে এটা কোনো ব্যাপার না। ওইটা ছয় মাস গেলে সব ডাবল হয়ে যাবে, সমস্যা নাই। কিন্তু ওরে হচ্ছে ফোন দিতে কন আমি গিয়ে হচ্ছে এক জায়গায় দেখা করে আসবনি।

সুমন : শোভন বা রাব্বানী দুইটা লাইনই তো তুমি কনফার্ম করতে পারবা?

রাকিব : হ্যাঁ, হ্যাঁ কনফার্ম করতে হবে।

সুমন : না, সেটা না, বলছি যে, শোভন বা রাব্বানী দুইটা লাইনই তো তুমি কনফার্ম করতে পারবা?

রাকিব : হ্যাঁ, হ্যাঁ পারব, দুইটাই পারব।

সুমন : সে জন্যই বলছি যে টাকার লাইনে ওর টাকার কোনো সমস্যা নাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার সাথে কথা বলার কথা বলতেছি। ঠিক আছে?

রাকিব : হুমম..

সুমন : আর সেটা যদি তুমি মনে করো সেক্ষেত্রে তুমি বলবা যে টাকার লাইনে হলে এভাবে কিভাবে কি করতে হয় সেটা তোমার দায়িত্ব তুমি শোভনরে দিয়ে না রাব্বানীরে দিয়ে করবা, ওর মেইনলি সর্বশেষ যে কথা আমারে বলেছে ঠিক আছে? সে কথাটা এ রকম ওর মোটামুটি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা আছে, রাজনৈতিক পরিবার, ও নেতা হবে টাকা কোনো ব্যাপার না। কোন ভাবে কী করবা, রাব্বানীর কাছে গোপন থাকবে কী করবা? এইটা পরে হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে আমি তোমাকে বলতেছি। তুমি. . . .

রাকিব : ও যদি টাকা দিয়ে কমিটি করতে না চায়, তাহলে আমি অরেক জায়গায় কিছু করব। এগুলো বুঝায় দেন।

এই পর্যন্ত অডিও পাওয়া গেছে।

অডিও ক্লিপের ব্যাপারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগকর্মী তম্ময় শাহা বলেন, ‘ সাধারণ সম্পাদকের অডিওর কথা শুনেছি। দায়িত্বশীল পর্যায়ের কারো কাছে এমনটা কামনা করা করে না ছাত্রলীগ। সাধারণ কর্মী হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অডিও ক্লিপের বিষয়ে সত্য ঘটনা নিশ্চিত করে সবার কাছে উপস্থাপন করা হোক।’

ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘অডিওটা আমার না। আমার ভয়েজের মতো নকল করে অডিও বানানো হয়েছে। আমার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসব করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, ‘এটার দায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কখনই এড়িয়ে যেতে পারে না। অবশ্যই এর দায়ভার তাদের নিতে হবে। অডিওতে যে নেতার নাম এসেছে আমার বিশ্বাস নেত্রী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘অডিওটা আমি শুনেছি। এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে।’

(প্রতিবেদনটি তৈরি করতে সহযোগিতা করেছেন এনটিভির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা মাহমুদ রানা)