নারীর উত্তরাধিকারের বিষয়ে আমাদের গলা স্তিমিত হয়ে যায়
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, ‘আমরা সবাই অত্যন্ত জোর গলায় নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলি। অথচ যখন নারীদের উত্তরাধিকারের কথা আসে, তখন আমাদের গলার শব্দ স্তিমিত হয়ে যায়।’
আইনমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে আইন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। বিচারপতি শামসুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দায়িত্ব হলো সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা। আমরা সে কারণেই হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের ব্যাপারে কথা বলি। এটা আমরা বলতাম না যদি নারীরা বঞ্চিত না হতেন।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করা এখন সময়ের দাবি। তবে সরকার এটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেবে না। হিন্দু সম্প্রদায় এগিয়ে এলে সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। তাই এই দেশ মুসলমানদের জন্য যেমন, হিন্দুদের জন্যও ঠিক তেমন।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা আইন করে তাদের সংখ্যালঘু হিসেবে পরিচিত করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ উদ্দেশ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম করেননি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যও তা নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা করতে চাই, যেখানে মুসলমান, হিন্দু সবাই সমানভাবে থাকতে পারবে এবং সকলেই বাঙালি এবং বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দেবে। মুসলমান, হিন্দু এইভাবে পরিচয় করতে আমরা চাই না এবং করতে দেবোও না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে যেতে চায়। বাহাত্তরের মূল সংবিধানে যে চার মূলনীতির কথা বলা আছে, সেগুলো সুনিশ্চিত করতে চায়। কারণ এগুলো বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু আইনের সংস্কার দরকার। পেনাল কোড প্রায় ১৬০ বছর আগের। সময়ের প্রয়োজনে এর কিছু ধারা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সরকার বসে নেই। এ বিষয়ে কাজ করছে। সাক্ষ্য আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছ। আগামী ডিসেম্বরে এটি সংসদে পাঠিয়ে জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় শীতকালীন অধিবেশনে পাসের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আইন কমিশন থেকে পাঠানো সাক্ষী সুরক্ষা আইন পরীক্ষা করা হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনেরও কিছু সংশোধন করা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।