মাসিক বেতনে চালক নিয়োগের নির্দেশ
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গণপরিবহনে মাসিক বেতনের ভিত্তিতে চালক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একটি কোম্পানির অধীনে চালকদের এই নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হাসানের ক্ষতিপূরণ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ট্রিপ ও দৈনিক ভিত্তিতে চালক নিয়োগ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। আর রোববার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
রায়ে বলা হয়েছে, বাস কোম্পানি ও চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দূর করতে বিদ্যমান বাস কোম্পানিগুলোকে একটি কোম্পানির অধীনে আনতে হবে। সব মহানগরে জোন বা লাইনভিত্তিক বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ করতে হবে। যেখানে সব গাড়িকে একটি কোম্পানির অধীনে নিয়ে এসে একেকটি রুটের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রঙের বাস সার্ভিস চালু করবে।
এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার সময় চালকদের দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা ও ডোপ টেস্ট করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা করবে বিআরটিএ। মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের প্রতিটি ক্রসিংয়ে ও বাস স্টপেজে চালকরা বেপরোয়াভাবে গণপরিবহন চালাচ্ছে কি না, তা নজরদারি করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। নির্মাণ করতে হবে যাত্রীদের জন্য যাত্রী ছাউনি।
রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে এ নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করতে বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ে বলা হয়েছে, বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুটি বাসের চালকের বেপরোয়া যান চালনার কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। হালকা যান চালনার লাইসেন্স থাকার পরও চালকরা ভারী যান চালাচ্ছিল। তাদের এই ভারী যান চালনার অনুমতি দিয়েছিল বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই দুর্ঘটনার দায় কোনোভাবেই এই দুটি পরিবহন কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।
এ জন্য রাজীবের দুই ভাই মেহেদী হাসান বাপ্পী ও আবদুল্লাহ হৃদয়কে ওই দুটি বাস কর্তৃপক্ষ দুই মাসের মধ্যে ২৫ লাখ টাকা করে ৫০ লাখ টাকা প্রদান করবে। রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, স্বজন পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেডের সব পরিচালক যৌথ ও এককভাবে ওই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
গত বছরের ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার মোড়ে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের রেষারেষিতে শরীর থেকে হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাজীবের। মাথায় আঘাত পান তিনি। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ এপ্রিল মারা যান রাজীব। এ ঘটনায় হাইকোর্টে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। ওই রিটের উপর গত ২০ জুন রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।