নাগরিকত্ব পেলে নিজ দেশে ফিরে যাবে, চীনকে জানাল রোহিঙ্গারা

Looks like you've blocked notifications!

নাগরিকত্ব পেলে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কথা চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংকে জানিয়েছেন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা।

চীনের রাষ্ট্রদূতসহ একটি প্রতিনিধি দল রোববার বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছান। দুপুর ১২টার দিকে তারা বান্দরবান জেলার নাইখ্যাংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

সংবাদ সংস্থা ইউএনবি জানায়, চীনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মত বিনিময়ে মিয়ানমার সরকারের প্রতি রেহিঙ্গাদের অবিশ্বাস ও অনাস্থার কথা জানিয়ে রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না। এর আগেও তারা অনেকবার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। তাই সরাসরি নাগরিকত্ব ও সহায় সম্বল ফেরত দিলেই আমরা ফিরতে পারি।’

কয়েকদফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার ব্যাপারে অনাগ্রহের কারণ জানতে চান চীন থেকে আসা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

আরসা বা কোনো এনজিও সংস্থার লোকজন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরতে অনুৎসাহিত করছে কিনা চীনের প্রতিনিধি দলের এমন প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারে ফেরত যেতে কেউ বাধা দিচ্ছে না। তাদের দাবিগুলো মেনে নিলে এখনই চলে যেতে প্রস্তুত সবাই।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, বান্দরবানের তুমব্রু খালের কাছে শূন্যরেখায় (নো ম্যানস ল্যান্ড) প্রায় এক হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফের অন্য ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাগরিক সুবিধা থাকলেও এখানে কিছুই নেই। রোহিঙ্গাদের নিয়ে দেড়শ’র মতো এনজিও কাজ করলেও এদিকে কারও নজর নেই। তবে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) আওতায় ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস (আইসিআরসি) প্রতি মাসে দুবার করে নো-ম্যানস ল্যান্ডে ত্রাণ দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা জেরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।

এদিকে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর চুক্তি সই করে। পরে দুই দেশ ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামে চুক্তি করে।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও একজন রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যায়নি। রোহিঙ্গাদের প্রথম দলের ফেরার কথা ছিল গত বছরের ১৫ নভেম্বর। কিন্তু রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ না থাকার কথা বলে তারা ফিরতে রাজি না হওয়ায় এ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এরপর এ বছরের ২২ আগস্ট থেকে তিন হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর দিন নির্ধারণ করা হয়। সাক্ষাৎকারের সময় রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে নানা শর্ত জুড়ে দেয়ায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল হয়নি।