পাবনায় ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেশ

‘শুধু গণধর্ষণ নয়, এটি লটস অব সিরিজ রেপ’

Looks like you've blocked notifications!
পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ আজ রোববার রাতে তাঁর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। ছবি : এনটিভি

পাবনায় গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনার সত্যতা পেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটি। আজ রোববার রাতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. জাহেদ নেওয়াজ জেলা প্রশাসকের কাছে ছয় পৃষ্ঠার এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। জেলা প্রশাসক জানান, তদন্ত কমিটি চারটি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ এবং দুটি বিষয়ে মতামত তুলে ধরেছে। তবে এ বিষয়ে কোনো সুপারিশ করেনি।

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এটি শুধু গণধর্ষণ নয়, এটি লটস অব সিরিজ রেপ।’

জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর মামলা না নিয়ে থানায় বিয়ে দেওয়া হয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ খবরের সত্যতা জানতে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তিন সদস্যের তদন্ত দল গত বৃহস্পতিবার থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের প্রতিটি বিষয় অনুন্ধান করে ধারাবাহিক দলবদ্ধ ধর্ষণ, ওসির নির্দেশে থানায় বিয়েসহ প্রতিটি ঘটনার সত্যতা পায়। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক এ তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবেন বলে জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, প্রথম দিন ২৯ আগস্ট সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাপুর যশোদল গ্রামের রাসেল আহমেদ ও হোসেন ড্রাইভার জনৈক ওসমানের সহায়তায় তিন সন্তানের জননী ওই গৃহবধূকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় গৃহবধূ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শরীফুল ইসলাম ঘন্টুর কাছে বিচার চাইলে ঘন্টু ওই নারীকে তার টেবুনিয়ার ছিটগোডাউনের একটি আড্ডাখানায় আটকে রেখে তিন দিন ধরে ধর্ষণ করেন। এ বিষয়ে নির্যাতিতা গৃহবধূ থানায় মামলা করতে গেলে পাবনা সদর থানার ওসি ওবাইদুল হক ধর্ষণ মামলা না নিয়ে মামলার আলামত নষ্ট করেন এবং দারোগা একরামুল হককে বিয়ের আয়োজন করতে নির্দেশ দেন। পরে ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া থেকে কাজী ফজলুল আযমকে ডেকে এনে পাঁচ ধর্ষকের একজন রাসেলের সঙ্গে ওই গৃহবধূর আড়াই লাখ টাকার দেনমহরে বিয়ে দেওয়া হয়।

তিন সদস্যের তদন্ত দলে ছিলেন পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জাহেদ নেওয়াজ, পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান ও পাবনা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কেএম আবু জাফর।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ নেওয়াজ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় ধরে ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য শুনেছি। সদর থানা ও অপরাধস্থল পরিদর্শন করে তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। তদন্ত শেষে সবাই ঐক্যমতের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের কাছে রোববার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’ এর বেশি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

তদন্ত কমিটির সদস্য পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান জানান, গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতিতা নারীর ডাক্তারি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে।

ইবনে মিজান আরো জানান, এ ঘটনায় থানায় বিয়ের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার এবং উপপরিদর্শক (এসআই) ইকরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলমান রয়েছে।