২৫ বছর পর মুক্তি পেলেন শিকলবন্দি রতন মিয়া

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাটিয়াদী গ্রামের বাড়ি থেকে মঙ্গলবার শিকলবন্দি রতন মিয়াকে উদ্ধার করা হয়। ছবি : এনটিভি

প্রতিবেশীর হামলায় মাথায় আঘাত পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাটিয়াদী গ্রামের রতন মিয়া। অনেক চিকিৎসা করেও সুস্থ হননি তিনি। হামলার তিন বছর পর বসত ঘরের বারান্দার পাশে একটি অন্ধকার ঘরে ছোট একটি কংক্রিটের পিলারে শিকলবন্দি করে তাঁকে আটকে রাখেন স্বজনরা। ওই কক্ষেই তাঁর খাওয়া-দাওয়া, প্রাকৃতিক কাজ, ঘুমানোসহ যাবতীয় সবকিছু সারতে হতো। এভাবে কেটে গেছে ২৫ বছর।

এদিকে শিকলবন্দি রতন মিয়াকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে স্থানীয় কয়েকটি অনলাইন। খবরটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এরপর তা নজরে আসে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসকের। তাঁর নির্দেশে আজ মঙ্গলবার সকালে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদ হাসান একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে শিকল খুলে রতন মিয়াকে উদ্ধার করেন। এখন রতন মিয়ার বয়স ৫৫ বছর। শিকলে শিকলে কেটে গেছে ২৫টি বছর।

হামলার সময় রতন মিয়ার বয়স ছিল ২৭ বছর। এর তিন বছর পর থেকে তাঁকে শিকলবন্দি করা হয়।

উদ্ধারের সময় পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুহুল আমিন ও পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সাহাব উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

রতন মিয়ার বড় ভাই আঙ্গুর মিয়া বলেন, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রতন মিয়া তৃতীয়। রতন মিয়া আর দশজনের মতোই সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ ছিলেন। কৃষিকাজের পাশাপাশি সংসারের কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে করতেন। প্রায় ২৮ বছর আগে একদিন জমিতে ধান খাওয়া নিয়ে কলহে প্রতিবেশী হযরত আলী গরু বাঁধার খুঁটি দিয়ে রতনের মাথার একপাশে প্রচণ্ড আঘাত করেন। এর ফলে প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয়ভাবে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিছুদিন পর রতন অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন। পরে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে কয়েক দফা চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পরে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে আনার পর রতনের অস্বাভাবিক আচরণ বাড়তে থাকে। বাড়ির বাইরে গেলে লোকজনের ওপর চড়াও হতেন এবং লোকজনকে মারতে শুরু করতেন। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে বাড়িতে শিকলবন্দি করে রাখা হয়।

এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়ার ইউএনও মো. নাহিদ হাসান জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি আলোড়িত হলে জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। তাঁর নির্দেশে আজ মঙ্গলবার সকালে রতন মিয়ার বাড়িতে গিয়ে শিকল খুলে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁকে পাকুন্দিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা বুঝে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জমির মো. হাসিবুস সাত্তার জানান, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় রতনের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।