শিবপুরের ইউএনওকে প্রত্যাহারের দাবি চেয়ারম্যানদের

Looks like you've blocked notifications!
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ইউএনও মো. হুমায়ন কবীর। ছবি : সংগৃহীত

ঘুষ গ্রহণ, অর্থ আত্মসাৎসহ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত করার অভিযোগ এনে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ন কবীরকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নয়টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানবৃন্দ। একই সঙ্গে তাঁরা সরকারের সুনাম রক্ষা করতে ইউএনওর বদলির দাবি জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

মঙ্গলবার শিবপুর উপজেলা পরিষদে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশিদ খান।

হারুনুর রশিদ খান বলেন, শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ন কবীর একজন আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ। তিনি ইউএনও পদের পাশাপাশি পৌরসভার প্রশাসক ও শিবপুরের সহকারী ভূমি কমিশনারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তাই প্রতিটি দপ্তরে তিনি নিজ ইচ্ছা মাফিক কাজ করেন। ঘুষ না দিলে কোনো কাজ হয় না। এমনকি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কাজ থেকেও তাঁকে ঘুষ দিতে হয়। অন্যথায় তিনি ফাইল আটকে রাখেন। শিবপুর পৌরসভার সড়ক-মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত বাস, ট্রাক ও সিএনজি থেকে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু তার কোনো প্রকার হিসাব নেই। পৌর প্রশাসক হওয়ায় ইউএনও ইচ্ছা মাফিক সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পৌরসভা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা লোপাট করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, শিবপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমির অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের সুবাদে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদারের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে মাসিক চাঁদা নিয়ে আসছেন। ইউএনওকে নির্ধারিত হারে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই তহসিলদার ও ভূমি অফিসের নায়েবদের শাস্তি মূলক বদলি করেন। ইউএনওর দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় দুই-একজন তহসিলদারকে তিনি সাসপেন্ড করে রেখেছেন। এখানেই ক্ষান্ত নন ইউএনও।

উপজেলা চেয়ারেম্যান আরো বলেন, ইউএনও কোনো রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ঘনবসতি এলাকা দুলালপুর ও মাছিমপুর ইউনিয়নে অবৈধ বালু উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন। মাসিক চুক্তি ভিত্তিক ঘুষের বিনিময়ে তিনি এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কাজও তিনি ইচ্ছামতো করেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের পরামর্শ টুকুও নেন না। ইউএনওর নানা অনিয়ম এখন শিবপুরে ওপেন সিক্রেট। ইউএনওর দুর্নীতির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় জনগণ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। তাই ইউএনওর বিরুদ্ধে উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূইয়া রাখিল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাপসী রাবেয়া, ভাইস চেয়ারম্যান শরিফ ছারোয়ার ভূইয়া, মাসিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হারিস রিকাবদার, সাধারচর ইউপি চেয়ারম্যান মাসিউল গনি স্বপন, যোষর ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল আহাম্মেদ, জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান নাদিম সরকার, আইয়ুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান সরকার, দুলালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল হক মেরাজ, পুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার হাসানউল সানী এলিস আহাম্মেদ, বাঘাবো ইউপি চেয়ারম্যান তরুন মৃধা ও চক্রধা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বেনজির আহাম্মেদ খান।

এর আগে শিবপুরে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে ও টেন্ডারের শর্তভঙ্গ করে স্থানীয় কলেজ গেইট বাজার থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছিল ইউএনও হুমায়ন কবিরের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় ইউএনওর কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছিল জেলা প্রশাসন। একই সাথে কেন আদালত অবমাননার মামলা করা হবে না এই মর্মে ইউএনও হুমায়ন কবিরকে একটি লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।

ঘুষ গ্রহণ, অর্থ আত্মসাৎসহ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিবপুরের ইউএনও মো. হুমায়ন কবির। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তথ্য নির্ভর হতে হবে। কোন প্রকল্পে অনিয়ম বা লোপাট হয়েছে সেটা বলতে হবে। ঢালাওভাবে অভিযোগ করলে তো হবে না।

বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, গতকালও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়েছে। ১৫টি মেশিন জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সঠিকভাবে জনগণকে সেবা দিতে হরহামেসাই অফিস টাইমের বাইরেও কাজ করে থাকি। শিবপুরে রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে। এখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে কাজ করলে কোনো কোনো রাজনীতিবিদ নাখোশ হন। এমন হলে কাজ করা দায় হবে যাবে।