র‍্যাবের ভাষ্য : ক্যাসিনোগুলো ‘সাম্প্রতিক সময়েই’ শুরু হয়েছে

Looks like you've blocked notifications!
গতকাল বুধবার রাতে ক্যাসিনোতে অভিযান শেষে গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীতে আলোচিত জুয়া খেলার ক্যাসিনোগুলো ‘সাম্প্রতিক সময়েই’ শুরু হয়েছে এবং তথ্য যাচাই-বাছাই করে অভিযান পরিচালনা করতে ‘বেশ কিছু সময় লেগেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।

গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর তিনটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‍্যাব। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিক ঢাকা মহানগর যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া এসব ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা ও মাদক সেবনের দায়ে মোট ১৮২ জনকে আটক করে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়। সিলগালা করা হয় চারটি ক্যাসিনো।

রাজধানীর ক্যাসিনো নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব ক্যাসিনো চালানোর ক্ষেত্রে যুবলীগের নেতাদের নাম উঠে আসে। এরপর গতকাল বিকেলে মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় গোলারটেক মাঠে ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের কয়েকটি ওয়ার্ডের যৌথ ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে যুবলীগের চেয়ারম্যান এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি বলছেন ৬০টি ক্যাসিনো আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনারা ৬০ জনে কি এত দিন আঙুল চুষছিলেন? তাহলে যে ৬০ জায়গায় এই ক্যাসিনো, সেই ৬০ জায়গার থানাকে অ্যারেস্ট করা হোক। সেই ৬০ থানার যে র‍্যাব ছিল, তাদের অ্যারেস্ট করা হোক।’

রাতে অভিযান শেষে গণমাধ্যমের সামনে পুরো বিষয়টি অবগত করতে আসেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তখন সাংবাদিকরা এত দেরিতে কেন এসব ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন।

জবাবে র‍্যাবের  নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘এই (ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাব) প্রতিষ্ঠানটি মূলত ক্রীড়া সংগঠন। এখানে লোকজন এসে আড্ডা দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যেটা হয়েছে, এর আড়ালে কয়েক মাস ধরে এ ধরনের কাজ হচ্ছে। আমরা যখনই কোনো তথ্য পাই, অভিযোগ পাই, সেটা আমাদের যাচাই-বাছাই করতে হয় এবং কারা কারা জড়িত, এ ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত এবং কিছু কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়। এ জন্য বেশ কিছু সময় লেগে যায়। যার কারণে, যে সময় এটা শুরু হয়েছে, সে সময় আমরা করতে পারিনি; সময় লেগে গেছে। তবে খুব বেশি দিন না, সাম্প্রতিক সময়ই এটা শুরু হয়েছে।’

‘আমরা এর মাধ্যমে স্ট্রং মেসেজ দিতে চাই, এ ধরনের অপরাধ যাঁরাই করেন না কেন, তাঁরা কিন্তু আজ হোক কাল হোক। এক ঘণ্টা আগে হোক, এক ঘণ্টা পরে হোক, আইনের আওতায় আসতেই হবে।’

সারওয়ার আলম আরো বলেন, ‘এখানে জুয়া খেলা হতো, একই সঙ্গে মাদক সেবনের একটা আখড়া ছিল। আজ অভিযান পরিচালনা করার সময় এখানে তিনটি ক্যাসিনো থেকেই বিপুল পরিমাণ মাদক ও প্রায় চল্লিশ লাখের বেশি টাকা আমরা জব্দ করেছি। এগুলো ক্যাসিনোর জুয়া খেলার টাকা। মাদক সেবনের কারণে এ তিনটি ক্যাসিনো থেকে মোট ১৮২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। আজকের অভিযানে পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেট অংশগ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া একটি ক্যাসিনো থেকে ২০ হাজার ৫০০ টাকার মতো জাল টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এখান থেকে একটি কষ্টিপাথরের মূর্তিও আমরা পেয়েছি।’

র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরো বলেন, এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি যিনি চালাতেন, তাঁকে (ঢাকা মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া) আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে অন্য যেসব ব্যক্তি রয়েছেন, আমরা সেটা তদন্ত করে দেখছি যে কারা কারা রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধেও আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

‘একটি বিষয় বলতে চাই, এই অপরাধ যাঁরাই করেন না কেন, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কিন্তু আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা চাই না, কোনোভাবেই এসব ক্রীড়া সংগঠনের আড়ালে ক্যাসিনো চলুক বা এ ধনের মাদকের আখড়া হোক। সরকার কিন্তু মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা যেকোনো মূল্যে মাদক বন্ধ করতে চাই এবং এ ধরনের ক্যাসিনো বন্ধ করতে চাই। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। যদি কেউ ক্যাসিনো চালানোর চেষ্টা করেন বা মাদক সেবনের আস্তানা গড়ে তোলেন, অবশ্যই তাঁকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

এ ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে কোন আইনে মামলা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট আইনেই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তবে যে আইনেই মামলা হোক না কেন, যারা যারা যেসব অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, সে অনুযায়ীই কিন্তু তাঁর বিচার হবে। এমনও হতে পারে, একটি আইনে মামলা দেওয়ার পর আরো অনেক বিষয়েও জড়িত থাকতে পারে, সে অনুযায়ী মামলা হবে।’