এবার বশেমুরবিপ্রবির ভিসির পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ

Looks like you've blocked notifications!

এবার গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ‘জয় বাংলা’ চত্বরে জড়ো হয়ে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বঙ্গবন্ধুর পুণ্যভূমিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থী একজন মানুষ ভিসি পদে রয়েছে। এটি হবে না, তাঁকে অপসারণ করতে হবে। ভিসির অপসারণ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান হবে না। এখন ‘এক দফা এক দাবি’তেই তাঁরা আন্দোলন করছের বলে জানান।

তবে এ ব্যাপারে উপাচার্যের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কেউ কথা বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, এই আন্দোলনের পেছনে কোনো ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ থাকতে পারে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সমস্যা নিয়ে প্রশাসন খুব দ্রুত বসে বিষয়টির সমাধান করবে।

সম্প্রতি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী’—এই বাক্যটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও দ্য ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে নিজের কক্ষে নিয়ে অশোভন ভাষায় কথা বলেন ভিসি। তাঁদের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়।

সেখানে ভিসিকে বলতে শোনা যায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? ফাজিল কোথাকার! বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তুমি জানো না? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তোমাদের মতো বেয়াদব তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তোর আব্বার কাছে শুনিস। গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোদিন?’

উপাচার্য বলছিলেন, ‘আমি খুলছি বলেই তো তোর চান্স হইছে। না হলে তো তুই রাস্তা দিয়া ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলেমেয়ে।’

অডিও ফাঁসের পর জিনিয়াকে শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ, অমানবিক, স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধক ও সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। এরপর নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন জিনিয়া। গতকাল বিকেলেই কর্তৃপক্ষ জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। এর আগেও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার দায়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এরপর রাতে ভিসিবিরোধী আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারপর গভীর রাতে একটি অফিস আদেশ আসে, যেখানে ১৪ দফা মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই অফিস আদেশ আমলে না নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। 

অফিস আদেশে যা আছে
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস আদেশে যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো হচ্ছে—ছয় মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শুরু করা, আবাসিক হলের প্রতি সিটের ভাড়া ১৫০ টাকা এবং গণরুমে ৫০ টাকা নির্ধারণ, ভর্তি ফি সর্বমোট ১৪ হাজার টাকা এবং সেমিস্টার ফি ২০০০ টাকা করা, বিভাগ উন্নয়ন ফি রদ করা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ছাড়া বহিষ্কার না করা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান না করা, সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, কোনো শিক্ষক ব্যক্তিগত কারণে শিক্ষার্থীর ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করলে তার শাস্তি নিশ্চিতকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নামে যে টাকা নেওয়া হয় তার হিসাব প্রদান, ভর্তি হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে কোনো শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার নোটিশ না দেওয়া, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, অডিটরিয়াম ও স্টুডেন্ট কমনরুম নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব চিকিৎসা ভবন নির্মাণ, ফেসবুক স্ট্যাটাস ও কমেন্টকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার না করা, প্রতি সেমিস্টারে বাস ভাড়া ৩০০ টাকা করা, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার না করা।
ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেছেন। ছবি : এনটিভি