স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় কিশোরকে বেত্রাঘাত, জুতার মালা

Looks like you've blocked notifications!
পাবনায় স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অপরাধে এভাবে চুল কেটে, গলায় জুতার মালা দিয়ে ঘুরানো হয়। ছবি : সংগৃহীত

পাবনায় এক স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোরের মাথার চুল কেটে, গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘুরানোর অভিযোগ উঠেছে। স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে ওই কিশোরকে এ সাজা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ মামলা নথিভুক্ত করে ওই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. আনিসুর রহমান, ইউপি সদস্য মো. মনিরুজ্জমান ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ওহিদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ জানায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে পাবনা সদর উপজেলায় স্কুলে আসার পথে এক স্কুলছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে এক কিশোর। পরে ছাত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ওই কিশোর পালিয়ে যায়। ঘটনার দুইদিন পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রাম্য সালিশ করেন স্কুল কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গ্রামপ্রধানরা। সালিশের রায়ে ওই কিশোরকে বেত্রাঘাত করেন তার বাবা। এর পর গ্রাম প্রধানরা ওই কিশোরের মাথার চুল কেটে ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘুরায়। এ ঘটনার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে টনক নড়ে পুলিশের।

১৯ সেপ্টেম্বর ওই কিশোরের বাবা মঞ্জু শেখ বাদী হয়ে সদর থানায় সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মামলার প্রধান তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।

ঘটনাটিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন ও অমানবিক বলে মনে করছেন স্কুলছাত্রী ও শিক্ষকসহ স্থানীয়রা।

নির্যাতনের শিকার কিশোরের মা আনিসা খাতুন বলেন, গ্রামে সালিশের মাধ্যমে আমার ছেলে বিচার হয়েছে। ছেলের বাবা তাকে শাসন করেছে।

বিচার প্রত্যাশী মামলার বাদী মঞ্জু শেখ বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার ছেলে শহরে কাজ করে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর আমার ছেলে গ্রামের একটি মেয়েকে পছন্দ করে। মেয়েটি স্কুলে যাওয়ার পথে তার হাত ধরেছিল। ঘটনাটি মেয়েটি তার পরিবারকে জানালে গ্রামের মাতব্বরা গত ১৮ সেপেন্টম্বর সকালে সালিশ বৈঠক ডাকে। সেখানে গ্রাম্য প্রধানরা আমার ছেলেকে লাঠি দিয়ে আমাকেই পিটাতে বলেন। কিন্তু একপর্যায়ে আমার ছেলেকে প্রকাশ্যে সবাই মিলে লাঠি দিয়ে ব্যাপকভাবে মারেন। আমার কিশোর ছেলের মাথার চুল কেটে গলায় জুতার মালা দিয়ে এলাকায় ঘুরায়। আমি গরিব অসহায় মানুষ। গ্রামের ক্ষমতাবান মাতব্বরা যেটা বলবে সেটাই তো আইন। তবে আমার ছেলে ভুল করেছে ঠিক আছে, তার জন্য এই ধরনের মধ্যযুগীয় কায়দায় সাজা দিবে? এটি মানা খুবই কষ্টের। দেশে আইন আছে, আদালত আছে। আমি বিচার চাই। আমার ছেলে অন্যায় করেছে কিন্তু যারা আমার ছেলেকে এইভাবে আঘাত করেছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।

এ বিষয়ে কথা হয় স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের স্কুল শুরু হয় সকাল ৯টা থেকে। ওই মেয়েটি সকালে প্রাইভেট পড়ার জন্য স্কুলে আসছিল। আসার পথে ঘটনাটি সকালে ঘটে। মেয়েটি পরিবারকে জানালে তার পরিবারের লোকজন স্কুলে আসে ও ওই ছেলেটির বাড়িতে যান। তাকে না পেয়ে আমাদের বিচার করতে বলে। এলাকার মাতব্বরা স্কুলমাঠে ওই ছেলের অভিভাবকের সামনে বিচার করে। আমরা কিছু করি নাই। বিচারে স্কুলের পক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তবে এভাবে বিচার করা ঠিক হয়নি। যেহেতু সে কিশোর তাই অন্যভাবে সাজা দেওয়া যেত। আইনের লোকের সাহায্য নেওয়ার দরকার ছিল।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ বলেন, আমাদের সোর্স ও স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে আমরা দ্রুত ঘটনার অভিযুক্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ভিকটিম কিশোরের বাবা মো. মঞ্জু শেখ বাদী হয়ে  সদর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন সালিশদারকে গ্রেপ্তার করেছি।

ওসি আরো বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আরো যাঁরা যুক্ত রয়েছেন তাঁদের প্রত্যেককে আাইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আইন নিজের হাতে কেউ তুলে নিতে পারবে না। সালিশের নামে অবৈধ বিচার সেটি কখনো আইন সমর্থন করে না। এই কিশোরের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। বিচারের দায়িত্ব আদালতের।