অর্ধযুগ কেটে গেলেও নিজস্ব এজলাস পায়নি সাইবার ট্রাইব্যুনাল
বাংলাদেশের একমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনাল ঢাকায়। ২০১৩ সালে ঢাকার ১ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে অস্থায়ী এজলাসে ভাগাভাগি করে বিচারকাজ শুরু করে সাইবার ট্রাইব্যুনালে। ২০১৯ সালে এসেও নিজস্ব কোনো এজলাস পায়নি সাইবার ট্রাইব্যুনাল। ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের সেরেস্তায় গিয়ে দেখা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে সাইবার ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। সে বছর থেকেই ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে সেখানে বিচার চলে।
২০১৪ সালে প্রথম মামলার রায় ঘোষণা হয়। এর পর থেকেই গত দুই বছর ধরেছে মামলা নিষ্পত্তির হার। পরে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর বেড়েছে মামলার সংখ্যাও। সব মিলে সাত বছরে মামলা হয়েছে দুই হাজার ৬৫১টি। এগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেক এক হাজার ৫৯টি নিষ্পত্তি হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র ১৫ মামলায়। আসামিরা খালাস পেয়েছেন ৯১টিতে।
আদালতের মামলার রেজিস্টার ঘেঁটে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মামলাই ফেসবুকে কটূক্তি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি, মানহানি, বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগের। আর এসব মামলা থানা ও আদালতে দায়ের করা হয়েছে।
তারেক আহম্মেদ নামের এক বিচারপ্রার্থী বলেন, তিনি বরগুনা থেকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলার হাজিরা দিতে এসেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মানহানির মামলা করা হয়।
তারেক বলেন, ‘দেশের একমাত্র আদালত এটি। এই আদালতের কোনো নিজস্ব এজলাস নেই। বর্তমানে ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে ভাগাভাগি করে মামলার বিচারকাজ চলে। এতে আমাদের মতো বিচারপ্রার্থীদের অনেক সমস্যা হয়। আমাদের ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা নেই। দুপুর পর্যন্ত আদালতে এসে অপেক্ষা করতে হয়, কখন মামলার কার্যক্রম শেষ হবে।’
‘এর পরে আবার মামলার হাজিরা শেষ করে বাড়িতে ফিরতে হয়। এতে করে আমাদের আসা-যাওয়া দুদিন লেগে যায়। আদালতের নিজস্ব এজলাস থাকলে ও সময়মতো আদালতের বিচারকাজ চললে আমরা হাজিরা দিয়ে আবার দিনে দিনে চলে যেতে পারতাম,’ যোগ করেন তারেক।
মিরাজ নামের আরেক বিচারপ্রার্থী জানান, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে তিনি একটি মামলা দায়ের করতে এসেছেন। আইনজীবী সকাল সকাল আদালতে থাকতে বলেছেন, তাই আদালতে সকাল ১০টায় এসেছেন। এখন শোনেন, আদালত শুরু হবে ২টায়। আর মামলার শুনানি হবে ৩টার পরে। এত সময় ধরে আদালতের কোথায় অপেক্ষা করবেন, তা বুঝছেন না। সাইবার ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব এজলাস এখন সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘সাত বছরেও এজলাস ছিল না, কথা সত্য। তবে খুব শিগগির আমরা পুরাতন জেলা জজ আদালত ভবনের ছয়তলায় নতুন এজলাস পাচ্ছি।’
ফৌজদারি আইনজীবী গাফফার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, দেশের একমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনাল ঢাকায় অবস্থিত। ৬৪টি বিভাগের মানুষ এখানে বিচার চাইতে আসেন। সাইবার ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব এজলাস এতদিনেও না পাওয়াটা দুঃখজনক।
গাফফার বলেন, নতুন এজলাস চালু হলে মানুষের ভোগান্তি অনেক কমবে, পাশাপাশি দ্রুত ন্যায়বিচার পাবে মানুষ।