সিলেটের সমাবেশে মির্জা ফখরুল

এখন ঘরে ঘরে ক্যাসিনো, জুয়ায় ভাসছে সারা দেশ

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। ছবি : ফোকাস বাংলা

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘১২ বছর ধরে জুয়া, ক্যাসিনো চলছে। সরকার ধরতে পারেনি। এখন যখন ধরা পড়ে গেছে, তখন বলছে বিএনপি সরকারের আমল থেকে এটা চলে আসছে। তাহলে ১২ বছর কী করছিল? আঙুল চুষছিল? এখন ঘরে ঘরে ক্যাসিনো। জুয়ায় ভাসছে সারা দেশ।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা বাতিল ও অবিলম্বে নতুন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের

সভাপতিত্বে শুরু হয় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। দুপুর ১টা থেকেই বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসা শুরু করে। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিলেট জেলা বিএনপির

সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ও সিলেট মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। ছবি : ফোকাস বাংলা

উপজেলা ও জেলা এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শেষে সন্ধ্যায় বক্তব্য শুরু করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিন সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে। সরকারের সবাই লুটেরা। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুট হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এই সরকার কোনো সরকার নয়। এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তারা নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট ডাকাতি করেছে। পুলিশ, বিজিবিসহ রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে ভোট ডাকাতি করেছে আওয়ামী লীগ। বন্দুকের নলের ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় বসে আছে এই সরকার।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সুপরিকল্পিতভাবে, সুচিন্তিতভাবে এই দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। তারা একটি একটি করে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। সংসদ নাই, একটি গৃহপালিত বিরোধীদল সেখানে বসে আছে।’

সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে আজ মঙ্গলবার বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ছবি : ফোকাস বাংলা

বিচার ব্যবস্থায় ভয়াবহ নৈরাজ্য চলছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে তাদের প্রয়োজনে, রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে। প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করেছে সরকার। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করতে হবে—এটাই সরকারের মূল চাওয়া। তাদের প্রতিপক্ষ হচ্ছে জনগণ।’

রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গারা দুই বছরের বেশি সময় ধরে এ দেশে আছে। একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেনি সরকার।

সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানী, প্রয়াত বিএনপিনেতা এম সাইফুর রহমান ও নিখোঁজ বিএনপিনেতা ইলিয়াস আলীকে স্মরণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ইলিয়াস আলী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমি তাঁকে স্মরণ করতে চাচ্ছি। এ রকম শত শত পরিবার তাদের স্বজনকে হারানোর জন্য ব্যথিত। তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা হলে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা থাকে না। বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী এখন পঙ্গু হয়ে জীবনযাপন করছে। ২৬ লক্ষ নেতাকর্মীর ওপর মামলা দেওয়া হয়েছে। বরেণ্য অনেক ব্যক্তিবর্গকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হলেন খালেদা জিয়া। এই নেত্রী যখন সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়ান, তখন চারদিকে একটা নূর ছড়িয়ে পড়ে। এই নূর হচ্ছে স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের নূর, গণতন্ত্রের নূর, ধর্মের নূর। ইতিহাস সৃষ্টি করা এই নেত্রীকে মুক্তি দিতেই হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে।’

সিলেটে বিএনপির সমাবেশে প্রশাসনের বাধা প্রদানের অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) তারা হঠাৎ করে সমাবেশ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। কেন? এর কারণ, কয়েকদিন আগে সিলেটে ছাত্রদল মিছিল করেছিল, তাতে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছিল। এতে তারা ভয় পেয়েছিল।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজ মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন। ছবি : এনটিভি

খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবে সিলেটের এই সমাবেশ উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এখন বিচারালয় সরকারের নির্দেশে চলে। যে মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে তাতে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ভয় পান বলেই তাকে আটক করে রেখেছেন।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আদালতের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাচ্ছে না। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করতে হবে।

সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনা ও খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ, সহক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসোইন, সাবেক সভাপতি ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, বিএনপি নেতা হুমায়ন কবির খান, কেন্দ্রীয় যুবদলের জ্যেষ্ঠ  সহসভাপতি মুর্তাজুল করিম বাবলু, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব হাসান জাকির তুহিন, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, কেন্দ্রীয় তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।