সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

Looks like you've blocked notifications!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা (ইউএইচসি) নিশ্চিত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ‘এটা বৈশ্বিক ও প্রাথমিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে।’

প্রদানমন্ত্রী বলেন, ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার সুফল বৈশ্বিক এবং এর জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’ স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ট্রাস্টিশীপ কাউন্সিলের প্ল্যানারি কাউন্সিলে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো একটি সাধারণ লক্ষ্যের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বয় আমাদের উন্নয়নের মূল।’ তিনি বলেন, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষে আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে।’ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রায় সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অপরিহার্য।’ তিনি বলেন, ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি ক্রমান্বয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে। এটি এমনকি অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকেও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোন ধরণের অর্থনৈতিক ক্লেশ ছাড়াই সহায়তা করছে।’

নানা রকম প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও বাংলাদেশ সরকার সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিশ্চিতকরণে উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সরকার নিরাপত্তা, সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা, নিরাপদ স্বাস্থ্য সেবা ও সুলভ মূল্যে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধপ্রাপ্তিসহ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ২০৩০ সাল নাগাদ অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে অকালমৃত্যু তিন ভাগের এক ভাগ কমিয়ে আনা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন ও কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এলে স্থানীয় স্বাস্থ্য সেবায় ব্যাপক গুরুত্ব প্রদান করে।’ তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবার গুরুতর অবস্থার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক গড়ে তুলি।’ তিনি বলেন, ‘এসব ক্লিনিক সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মডেল, যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে দক্ষ কর্মী, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি দেওয়া হয় এবং স্থানীয় লোকেরা এসব ক্লিনিকের জন্য জমি দেন।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সরকারের ১৪ হাজার ৮৯০টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৭৪৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়েছে, যেখানে আনুমানিক ৬ লাখ লোককে দৈনিক সেবা দেওয়া হয়ে থাকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসব ক্লিনিক জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ লোককে সেবা দিতে পারে এবং লোকদের আবাসস্থল থেকে ৩০ মিনিটের হাঁটার দূরত্বে এগুলো অবস্থিত।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন প্রতিটি ক্লিনিক থেকে গড়ে আনুমানিক ৪০ জন রোগী সেবা গ্রহণ করে এবং এদের মধ্যে ৯০ শতাংশ নারী ও শিশু।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যকর স্বাস্থ্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ফলে মাতৃমৃত্যু হার ১৭২, শিশু মৃত্যুহার ২৪ এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যু ৩১-এ কমে এসেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে পূর্ণ টিকা কভারেজ এখন ৮২ দশমিক ৩ শতাংশ, গড় আয়ু ৭২ দশমিক আট বছরের অধিক এবং প্রতি নারীতে জন্মের হার ২ দশমিক ১ এ নেমে এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ রোগ নির্মূলে তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার ইতিমধ্যে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্ভুক্ত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ভিশন ২০২১ এবং ২০৪১ এ স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। আমাদের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আমরা সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা আরো সম্প্রসারণ এবং এক বছরের কম বয়সী শিশু ও ৬৫ বছরের অধিক বয়সী ব্যক্তিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।’

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ সভার (ইউএনজিএ) ৭৪তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আট দিনের সরকারি সফরে রোববার বিকেলে নিউইয়র্কে পৌঁছান।

পরে, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদরদপ্তরের সাধারণ পরিষদ কক্ষে জলবায়ু পদক্ষেপ শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ২০০ কোটি মানুষের জীবন ধ্বংসের মুখে পড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী চরম জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে কার্যকর আগাম সতর্কবার্তা প্রক্রিয়ার কারণে হতাহতের সংখ্যা হাজার হাজার থেকে হ্রাস পেয়ে প্রায় শূন্যতে নেমে এসেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অধিক ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পানি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় মোকাবেলা করতে ৮২ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সহ অভিযোজন ও সহনশীলতা তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার দুর্যোগ চলাকালে লোকজনকে আশ্রয় দিতে উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় ৪ হাজার ২৯১ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৫২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রায় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক বিপদে সতর্কবার্তা জানাতে এবং প্রস্তুতি সহজতর করতে দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘রিস্ক ইনফর্মড আরলি অ্যাকশন পার্টনারশিপ’ (আরইএপি) চালু করতে পেরে তিনি খুশি। যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ উদ্ভাবিত এটি একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী নতুন পদক্ষেপ।

শেখ হাসিনা জানান, তিনি আনন্দের সাথে ঘোষণা করেছেন যে ৫০টির বেশি দেশ ও ২০টির বেশি সংস্থা এটি চালু করতে আজ এই অংশীদারত্বে যোগ দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মানবিক, উন্নয়ন ও জলবায়ু বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনকে একত্রিত করার মাধ্যমে ২০২৫ সাল নাগাদ দুর্যোগের কবল থেকে সারাবিশ্বের ১০০ কোটি মানুষকে রক্ষা করাই হচ্ছে আরইএপির লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগাম জোরালো সতর্কবার্তা প্রক্রিয়া এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সমন্বিত পদক্ষেপ কিভাবে বড় পরিবর্তন ঘটাতে পারে তা বাংলাদেশ করে দেখিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সুতরাং আমরা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সাথে আমাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে এবং ভবিষ্যত বিপদের ঝুঁকি মোকাবিলায় অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে আনন্দের সঙ্গে এই উদ্যোগে যোগ দিয়েছি।’