সুনামগঞ্জে নৌকাডুবি : ১০ জনের লাশ উদ্ধার, অভিযান সমাপ্ত

Looks like you've blocked notifications!
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের কালিয়াকুটা হাওরে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যাত্রীবাহী নৌকাডুবির ঘটনায় আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত মোট ১০ জনের লাশ উদ্বার করা হয়। ছবি : এনটিভি

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালিয়াকুটা হাওরে ইঞ্জিনচালিত নৌকাডুবির ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। এ মর্মান্তিক ঘটনায় আর কোনো নিখোঁজ না থাকায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নৌকাডুবির ঘটনার পর রাতে চার শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর আজ বুধবার সকালে উদ্ধার করা হয় আরো দুই শিশুসহ পাঁচজনের লাশ। সবশেষ দুপুরে আরো এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয় বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম। 

ওসি আরো বলেন, নৌকাটিতে মোট ৩১ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ২১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নৌকাটি ডুবেছে কালিয়াকুটা হাওরের আইনুলের বিলে। ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাটি ডুবে যায়। 

নিহতরা হলেন রফিনগর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের বাবুলের শিশুপুত্র শামীম (২) বদরুলের শিশু ছেলে আবির (৩), পেরুয়া গ্রামের ফিরোজ আলীর ছেলে শিশু ছেলে আজম (২) এবং নোয়াগ্রামের আফজাল হোসেনের শিশু ছেলে সোহান (৩), মাছিমপুর গ্রামের জাসদের মেয়ে শান্তা মনি (৩), আরজ আলীর স্ত্রী রহিতুন্নেছা (৩৫), আফজল হোসেনের স্ত্রী আজিরুন বেগম (৩৫), তাদের মেয়ে আজমিনা (১১), আফজাল হোসেনের ছেলে আসাদ (৫) এবং পেরুয়া গ্রামের নসীবুল্লার স্ত্রী করিমা বিবি (৭৮)। নিহতদের অনেকেই একে-অপরের আত্মীয়। 

রাফিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজওয়ান খান আজ সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যার দিকে ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রাম থেকে চরনারচর ইউনিয়নের পেরুয়া গ্রামে যাচ্ছিল। নৌকায় নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৩১ জন যাত্রী ছিল। পথে কালিয়াকুটা হাওরের আইনুল বিলে নৌকাটি ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়।

নৌকায় করে অনেকেই পেরুয়া গ্রামের ফিরোজ আলীর ছেলে মোয়াজ্জেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিল। আজ সেই বিয়ে হওয়ার কথা। এরা বিয়ে বাড়িতে নাইওর যাচ্ছিল। এতে অনেকেই ছিল আত্মীয়স্বজন। ঝড় শুরু হওয়ার পর অনেকেই নৌকায় থাকা স্বজনদের মোবাইলে ফোন করে। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করেনি। ফলে স্বজনদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়, নৌকাটি ডুবে গেল কি না।

এই দুশ্চিন্তা থেকেই স্বজনরা আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে ১৫-২০টি নৌকা নিয়ে আইনুলের বিলের দিকে রওনা হয়। রাতেই চার শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল খান।

চেয়ারম্যান আরো জানান, তিনি নৌকাডুবির খবর পান পুলিশের মাধ্যমে সন্ধ্যা ৭টার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানে যান। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় আর উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা যায়নি। আজ সকালে অভিযান চালিয়ে আরো পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সবশেষে দুপুরে আরো একটি মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়।

একই নৌকায় যাত্রী ছিলেন নিহত আজিরুন বেগমের ভাই আমিন নুর (২৭)। তিনি নৌকাডুবির পর প্রায় এক ঘণ্টা হাওরে সাঁতরে মাছিমপুর গ্রামে গিয়ে উঠতে পারেন।

আজ সকালে আমিন নুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নৌকাডুবির পর আমার বোন আমার হাতে ধরেন। কিন্তু একপর্যায়ে ঢেউয়ের মুখে তিনি তলিয়ে যান। আমি আর তার কোনো খোঁজ পাইনি। তার মেয়েরও দেখা পাইনি। পরে আমি বাঁচার জন্য মাছিমপুরের দিকে সাঁতরাতে থাকি অন্ধকারের মধ্যে। প্রায় এক ঘণ্টা সাঁতরিয়ে গ্রামে উঠি।’  

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) বেলায়েত হোসেন জানান, দুপুরে পেরুয়া গ্রামের আরজ আলীর মেয়ে আজমিনা (১১) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।