সন্ধান মেলেনি বাউল সুভাষের, পুলিশের ঠেলাঠেলিতে হয়নি মামলা
মামলা গ্রহণে দুই থানার ঠেলাঠেলিতে সন্ধান মেলেনি অপহৃত খ্রিস্টান বাউল সুভাষ রোজারিওর। চাটমোহর থানায় সাধারণ ডায়েরি হলেও সীমানা জটিলতার অজুহাতে পাবনা কিংবা নাটোর জেলার সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা না নিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ বাউলের পরিবারের। লালন সাধক সুভাষকে উদ্ধারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে আতঙ্কিত স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়।
অপহৃত সুভাষের ভাই লুইস রোজারিও জানান, আমাদের সম্প্রদায়ের প্রাক্তন এই সেমিনারিয়ান সুভাষ রোজারিও জাগতিক ভাবনা ছেড়ে দীর্ঘদিন ধরে বেছে নিয়েছেন বাউল জীবন। লালনের বাণী ছড়িয়ে দিতে গান করেন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, মঞ্চ ও টেলিভিশনে। জনপ্রিয় এই লোকসংগীত শিল্পী ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে নাটোরের জোনাইল গ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে পাবনার চাটমোহর রেল স্টেশন থেকে নিখোঁজ হন। পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও সুভাষের খোঁজ না পেয়ে আমরা হতাশ। তাঁর নিখোঁজের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে খ্রিস্টান পল্লিগুলোতেও।
নিখোঁজের পর সুভাষের মুঠোফোন ও একাধিক অপরিচিত নাম্বার থেকে বেশ কয়েকবার মুক্তিপণ চাওয়া হয় বলে জানান পরিবারে লোকজন।
এদিকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সুভাষকে পাওয়া গেছে জানিয়ে দিনাজপুর রেলওয়ে পুলিশের এসআই রিপন বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নম্বর দেন চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দিন। কথিত এসআই রিপন বাউল সুভাষ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে চিকিৎসার জন্য পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকাও নেন। পরে রিপন বড়ুয়া কিংবা সুভাষ কাউকেই হাসপাতালে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ ঘটনার পর থানা সীমানা জটিলতার অজুহাতে মামলাও নিচ্ছে না পাবনা কিংবা নাটোর জেলার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
নিখোঁজের রাতে জোনাইল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বহনকারী চালক জানান, ওই রাতে আমি চাটমোহর স্টেশনের পাশে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে যাই। পরে রাতে জনৈক ব্যক্তি আমাকে ফোন করে বলেন, ‘ওই বাউলকে তুমি কোথাকে নিয়ে এসেছ?’ সব বলার পর ফোনটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি। তবে ওই লোক সুভাষ বাউল নয় বলেও দাবি সিএনজি চালকের। তার পর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ওই বাউলের।
নিখোঁজের সহপাঠী ও জোনাইল ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মহসীন আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরেই সুভাষ আধ্যাত্মিক জীবন বেছে নিয়েছেন। নিখোঁজ হওয়ার দিনেও আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে গেছেন। তাঁর কোনো শত্রু নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় মিশন স্কুলের শিক্ষক হিউবার্ড রোজারিও, সহপাঠী আলফুজ্জামান, মহসিন আলী, জমির উদ্দিনও একই কথা বলেন। তাঁরা যেকোনো মূল্য অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেতে সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চাটমোহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনাটি আমার থানা এলাকায় নয়, তাই মামলাটি বরাইগ্রাম থানায় করার জন্য তাদের পরামর্শ দিয়েছি। তবে ভুলে চাটমোহর থানায় সাধারণ ডায়েরি নেওয়া হয়েছে। তবে তদন্ত করা হচ্ছে।’
এদিকে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ কুমার দাস বলেন, ‘মামলা হবে সেই থানায়, যে থানা এলাকা ঘটনাস্থল। সেক্ষেত্রে মামলাটি চাটমোহর থানাতেই হওয়ার কথা। আমি এ বিষয়ে আমার পুলিশ সুপার স্যারকে পাবনার স্যারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাব।’
পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’