পল্টন থানার ওসির বিরুদ্ধে ধর্ষণ অভিযোগের ‘প্রমাণ’ মিলেছে

Looks like you've blocked notifications!
পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক। ছবি : সংগৃহীত

চাকরি দেওয়ার নামে এক তরুণীকে ঢাকায় এনে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে। ওই তরুণী পুলিশ সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। পরে ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। 

 আজ সোমবার দুপুরে মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোনালিসা এনটিভি অনলাইনকে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনিই এই অভিযোগের তদন্ত করেছেন।

অতিরিক্ত উপকমিশনার মোনালিসা বলেন, “এই ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরে একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন ওই তরুণী। তারপর ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে আমি গত সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছি পুলিশ সদর দপ্তরে। প্রতিবেদনে জানিয়েছি, ‘ওই তরুণীর দায়ের করা অভিযোগের আংশিক প্রমাণ পেয়েছি। প্রমাণ পাওয়া ঘটনার বিবরণ দিয়ে আমি প্রতিবেদন দাখিল করেছি।’”

গত ১ আগস্ট ওই তরুণী পুলিশ সদর দপ্তরে পল্টন থানার ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগটি জমা দেন। ওই অভিযোগে তরুণী বলেন, ‘নওগাঁ কলেজে পড়া অবস্থায় মাহমুদুল হকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি নওগাঁ গেলে দেখাও হতো আমাদের। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকায় আমি তাঁকে বিশ্বাস করতে শুরু করি। একপর্যায়ে ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকায় আনেন। ঢাকায় গেলে আমাকে হোটেল ক্যাপিটালে রাখা হয়। সেখানে আমাকে খাবারের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে অচেতন করেন এবং আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন।’

অভিযোগে তরুণী বলেন, ‘জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর আমি যখন বিষয়টি বুঝতে পারি তাঁর কাছে জানতে চাই, আমার সঙ্গে কেন এমনটি করা হলো। সে সময় মাহমুদুল হক আমাকে বোঝান, তিনি আমাকে ভালোবাসেন। এবং আমাকে বিয়ে করতে চান। মাহমুদুল আমাকে জানান, সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিলে যদি আমি রাজি না হই তাই তিনি এমনটা করেছেন। আমি নিরুপায় হয়ে মেনে নিতে বাধ্য হই।’

তরুণী আরো বলেন, ‘মাহমুদুল হক কোরআন শরিফের ওপর হাত রেখে আমাকে প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি আমাকে বিয়ে করবেন। তারপর থেকে তিনি একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। এর ভেতরে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর আমি গর্ভবতী হই। আমি সেই বাচ্চা নিতে চাইলে তিনি আমাকে নিষেধ করেন। একপর্যায়ে তিনি আমাকে বাচ্চা নষ্ট করতে বাধ্য করেন। এরপর থেকে আমি তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকি। হঠাৎ করে ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল থেকে তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কোনো উপায় না দেখে আমি তাঁর অফিসে চলে যাই। বিষয়টি তখন অফিসের অনেকেই জেনে যায়। তিনি আমাকে দ্রুতই বিয়ে করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেন।’

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘ঢাকা থেকে ফিরে আমি এ বিষয়গুলো তাঁর (মাহমুদুল হক) বাবাকে জানাই। তাঁর বাবা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেন। কিছুদিন পর হঠাৎ তাঁর বাবা আমাকে এবং আমার পরিবারকে হুমকি দিতে থাকেন। আমি যদি তাঁর ছেলের জীবন থেকে সরে না যাই তাহলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আমার চাকরি বাতিলের ব্যবস্থা করবেন। এরপর আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে ২০টি ঘুমের ট্যাবলেট খাই। পরে আমাকে ২০১৯ সালের ১২ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেই রাতে আমার পরিবার বিষয়টি মাহমুদুল হকের বাবাকে জানালে তিনি আরো উল্টা আমাদেরকে হুমকি দেন।’

আজ সোমবার ওই তরুণী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি পুলিশ সদর দপ্তরে মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। পুলিশ তদন্ত করে সঠিক বিচার করবে বলে আমি বিশ্বাস রাখি।’

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।’

তবে মতিঝিল জোনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওসির বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। যে হোটেলে তরুণীকে রেখে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে ওই হোটেলের একটি কক্ষ সেদিন মাহমুদুল হকের নামে বরাদ্দ রাখা ছিল। এ ছাড়া আরো অনেক ঘটনার প্রমাণ তদন্তে উঠে এসেছে।’

জানা যায়, ওসি মাহমুদুল হক ২০০১ সালে এসআই পদে পুলিশে যোগ দেন। তাঁর বাড়িও নওঁগা জেলায়। তিনি ২০১৭ সালের ২ জুলাই পল্টন থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন। তাঁর স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে।