ওবায়দুল কাদের বললেন

গুটি কয়েক চাঁদাবাজ-দুর্নীতিবাজের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না

Looks like you've blocked notifications!
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। ছবি : এনটিভি

গুটি কয়েক চাঁদাবাজ-দুর্নীতিবাজের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। চক্রান্ত চলছে উল্লেখ করে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি। সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকার করতে হবে- বিএনপি নেতাদের এমন দাবি হাস্যকর বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মবার্ষিক উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ সময় তথ্য ও গবেষণা উপকমিটি প্রকাশিত ‘শুভ জন্মদিন : অভিবাদন জননেত্রী শেখ হাসিনা’ শীর্ষক স্মারক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন ওবায়দুল কাদের। আলোচনায় তিনি বলেন, গুটি কয়েক চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজের দায় নেবে না আওয়ামী লীগ।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজদের বর্জন করুন। যারা বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগিয়ে, শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে, অপকর্ম করবে, দুর্নীতি করবে, লুটপাট করবে, ভূমি দখল করবে তারা আওয়ামী লীগের লোক হতে পারে না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের লোকের অভাব নেই, খারাপ লোকের দরকার নেই। ভালো লোকদের জন্য দরজা খুলে দিন। ভালো লোকদের জন্য শেখ হাসিনা দরজা খুলে দিয়েছেন। রাজনীতির দুয়ার, আওয়ামী লীগের দুয়ার ভালো লোকদের জন্য খুলে দিতে হবে। গুটি কয়েক দুর্নীতিবাজ, লুটেরা-মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজদের জন্য গোটা পার্টি দুর্নামের ভাগীদার হতে পারে না। তাদের বর্জন করুন।’

আওয়ামী লীগে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালনের আহ্বান জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে পার্টির ক্লিন ইমেজ গড়ে তুলতে হবে। ক্লিন ইমেজ করতে হলে আমাদের পরগাছামুক্ত আওয়ামী লীগ গড়ে তুলতে হবে। সেটাই শেখ হাসিনার স্বপ্নের আওয়ামী লীগ। সেটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আওয়ামী লীগ। আজকে দুঃসময়ের কর্মীরা আওয়ামী লীগে কোণঠাসা হবে, সে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নয়, সে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নয়। দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে যাবে সেটা আওয়ামী লীগ নয়, আওয়ামী লীগের আদর্শ সেখানে নেই। আমি তাই আপনাদের আহ্বান জানাব, আওয়ামী লীগকে বিশুদ্ধ করুন, আওয়ামী লীগ থেকে দুষিত রক্ত বের করে দিন। বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করুন। সেটাই আজকের সময়ের আহ্বান, সেটাই শেখ হাসিনার আহ্বান। সেটাই আমাদের নেত্রীর চাওয়া।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি নিউইয়র্কে বলেছেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছেন পৃষ্ঠপোষকদের কী করা হবে? পৃষ্ঠপোষক হোক গডফাদার হোক, অপকর্ম যারাই করবে, অপকর্মকে যারাই মদদ দিবে, যারা দুর্নীতি করবে, যারা লুটপাট করবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কাজেই এই ব্যাপারে আপসের প্রশ্নই উঠে না। নেত্রীর ঘোষণা বাস্তবে রূপ নিতে হবে। আমার বিশ্বাস আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

সমাবেশের অনুমতি পেয়েই সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিএনপির দাবি হাস্যকর বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বিএনপির জাতীয় সরকার গঠনের দাবি মামা বাড়ির আবদার বলে উড়িয়ে দেন তিনি। বলেন, আজকে বিএনপি নেতারা সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি তুলেছেন। আগে বলতেন অনুমতি মিলে না, এখন অনুমতি পেয়েই ক্ষমতার রঙিন খোয়াব দেখছেন। ক্ষমতার রঙিন খোয়াব অচিরেই কর্পূরের মতো উবে যাবে।

বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগকে চেনেন না। আন্দোলন কত প্রকার ও কী কী, আওয়ামী লীগ অতীতে হাঁড়ে হাঁড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে করলে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করব। আর সহিংসতা করলে, সহিংসতার কোনো উপাদান যুক্ত করবেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সমুচিত জবাব দিতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত আছে। তাই রঙিন খোয়াব দেখে লাভ নেই। জাতীয় সরকারের দাবি মামা বাড়ির আবদার। এই আবদার বাংলার জনগণের কাছে হাস্যকর। বিএনপি নেতাদের কথা শুনলে, মির্জা ফখরুলের কথা শুনলে আমার কাছে মনে হয়, তিনি একজন পরাজিত রাজনীতিকের মতো অসংলগ্ন প্রলাপ বকছেন। এটা তাঁর অসংলগ্ন প্রলাপ ব্যর্থতার ফলশ্রুতি। আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ একজন পরাজিত রাজনৈতিক। পরাজিত রাজনীতিকরা যেমন প্রলাপ বকতে থাকে, মির্জা ফখরুলের অবস্থা তেমন।

সামনের খেলা মোকাবিলায় দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন। অনেক খেলা আছে, এই দেশে অনেক চক্রান্ত আছে এ পর্যন্ত ২০ বার নেত্রীর ওপর আক্রমণ হয়েছে, তাঁকে সরিয়ে ফেলারও ষড়যন্ত্র আছে। কাজেই যেকোনো পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগই সমুচিত জবাব দিতে পারবে। আপন ঘরে যেন শত্রু না হয়, আপন ঘরে যার শত্রু, তার শত্রুতা করার জন্য বাইরের শত্রুর দরকার নেই। আপন ঘরে আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।