পূর্বাচল বাণিজ্যিক নগরে যা থাকছে

ব্যবসার জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদার জায়গা জোগাতে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারে রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে নতুন বাণিজ্যিক শহর গড়ে তোলা হচ্ছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ডেভেলপার কোম্পানি সূত্র জানায়, সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট (সিবিডি) নামের নতুন এ বাণিজ্যিক শহরটি আগামী সাত বছরে শতাধিক একর জমির ওপর তৈরি করা হবে।
সিবিডিতে ৪৬৫ মিটার উচ্চতার ৯৬তলা বিশিষ্ট আইকনিক লিগ্যাসি টাওয়ার, ৭১তলার স্বাধীনতা টাওয়ার ও ৫২তলা বিশিষ্ট ভাষা টাওয়ারসহ ৪১টি গগণচুম্বী ভবন থাকবে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এসব ভবনে ৩৮.৪৪১ মিলিয়ন বর্গফুট জায়গা পাওয়া যাবে।
সূত্র জানায়, অন্যান্য ৩৮টি ভবনের প্রত্যেকটি উচ্চতায় ৪০তলার সমান হবে। বাণিজ্যক শহরের এ পরিকল্পনায় একটি বড় সম্মেলন সেন্টারও থাকবে।
বাণিজ্যিক এ নগর বিনির্মাণ করতে যাওয়া ডেভেলপার কোম্পানি কনসোর্টিয়াম অব পাওয়ারপ্যাক হোল্ডিংস ও কাজিমা করপোরেশনের চিফ অপারেটিং অফিসার ও ডিরেক্টর (অপারেশন) কামরুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য ইতিমধ্যে রাজউকে জমা দিয়েছি। অনুমোদন পাওয়ার পরই ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দেব।’
২০১৮ সালে এক উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক ও জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজিমা যৌথভাবে রাজউকের কাছ থেকে এ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পায়। পূর্বাচলের ১৯ নম্বর সেক্টরে ১১৪ একর জমির ওপর এ কাজ করবে তারা।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজে নেতৃত্ব দেবে পাওয়ারপ্যাক। আর কারিগরি অংশীদার হিসেবে জাপানের কাজিমা তাতে সহায়তা করবে।
সূত্র আরো জানায়, নিলামের শর্ত অনুসারে মোট জমির দামের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩১৭.৬৩ কোটি টাকা এরই মধ্যে রাজউককে পরিশোধ করেছে পাওয়ারপ্যাক-কাজিমা কনসোর্টিয়াম।
পাওয়ারপ্যাক কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের দায়িত্ব পাওয়ার পরই তারা নির্মাণকারী ঠিকাদার হিসেবে চীনা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার চায়না ইন্টারন্যাশন্যাল গ্রুপ লিমিটেড এবং প্রকল্পের নকশার জন্য বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ প্রকৌশল কোম্পানি দক্ষিণ কোরিয়ার হিরিম আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এ ছাড়া, নির্মাণ ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনার জন্য ফরাসি প্রতিষ্ঠান আরকিটাইপ কনস্ট্রাকশন হোল্ডিংস লিমিটেড, মাটি পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং ট্রাফিক ও পরিবেশের প্রভাব মূল্যায়নের জন্য প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপারকে (পিডব্লিউসি) নিযুক্ত করা হয়েছে।
বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাইস ওয়াটারহাউজ, ইন্ডিয়াকেও নিযুক্ত করেছে পাওয়ারপ্যাক।
রাজউক সূত্র জানায়, প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনায় পাওয়ারপ্যাক-কাজিমা কনসোর্টিয়াম কর্তৃক জমা দেওয়া মহাপরিকল্পনা বিষয়ে রাজউক গত সপ্তাহে একটি উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় সভায় বসেছিল।
রাজউকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পাওয়ারপ্যাক-কাজিমা, হিরিম ও প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপারের প্রকৌশলীরাও এতে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় পাওয়ারপ্যাক-কাজিমা কনসোর্টিয়ামের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা প্রকল্পের ওপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা দেন। যেখানে ভবনগুলোর নকশা, ভূমিকম্প প্রতিরোধক আধুনিক প্রযুক্তি ও স্মার্ট সবুজ শহরের ধারণা তুলে ধরা হয়।
সভায় তারা আরো জানান, বিশ্বব্যাপী সমাদৃত দক্ষিণ কোরিয়ার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান হিরিম ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে এ প্রকল্পের ওপর কাজ করছে।
রাজউক চেয়ারম্যান সভায় জানান, তাদের পরিকল্পনাগুলোর ব্যাপারে বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে তার বিশেষজ্ঞ মতামত দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ গগণচুম্বী ব্যবসায়িক নগরের মেগা উন্নয়ন পরিকল্পনার তদারকি করার মতো বিশেষজ্ঞ রাজউকের নেই।
পাওয়ারপ্যাক কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে যারা ঘরবাড়ি বা আবাসিক এলাকাতে ব্যবসা করছেন, ঢাকায় তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য বাণিজ্যিক নগরী পূর্বাচলের সিবিডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তারা বলছেন, পূর্বাচলে ৫৭ একর এলাকার মতো খোলামেলা স্থানের পাশাপাশি সাড়ে ১২ একরের সবুজ এলাকাও থাকবে।
২০টি টাওয়ারে ১২.৯৯ মিলিয়ন বর্গফুটের অফিসের স্থানের পাশাপাশি ১৫টি টাওয়ারে তিন হাজার ৮৫৮টি আবাসিক ইউনিটও থাকবে। ৪০ হাজার গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থাও থাকবে সেখানে।