মোহাম্মদপুরে বিহারিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে আজ শনিবার দুপুরে বিহারিদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি : এনটিভি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে বিহারিদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পুলিশের একটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

আজ শনিবার দুপুরে পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপকমিশনার (ডিসি) আনিসুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

আনিসুর রহমান বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে বিহারিদের ৩১ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। তারা সেই টাকা পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন তাদের সংযোগ কেটে দিয়েছে। তাই বিহারিরা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ শুরু করে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তারা আমাদের ওপর আক্রমণ করে। সে সময় তারা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল মেরেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তারা বিক্ষোভ করছে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদেরও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

আনিসুর রহমান বলেন, বিহারিরা কয়েকটি স্থানে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ করেছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।

আজ দুপুর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে জেনেভা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, শত শত পুলিশ সদস্য ক্যাম্পের ভেতরে ঢুকে লাঠিপেটা করে এবং সামনে থেকে সবাইকে সরে যেতে বলে। তখন পুরো ক্যাম্পের রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। সবাই যে যার ঘরে ঢুকে যায়। ক্যাম্পের ভেতরের গলি দিয়ে যখন পুলিশ ঢোকে তখন ক্যাম্পের বাসিন্দারা ঘরের ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গালাগাল দিতে থাকে।

পুলিশ এক গলি থেকে অন্য গলিতে প্রবেশ করলেই ক্যাম্পের লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে গলিতে আসছে।

সে সময় মইদুল হাসান নামের এক বৃদ্ধ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘৪৮ বছর ধরে এই ক্যাম্পে আছি। কিন্তু কখনো বিদ্যুৎ বিল দেইনি আমরা। এখন কেন বিল দিব? আমাদের বিল তো দেয় জাতিসংঘ। এখন হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বিল কেন? ২৪ ঘণ্টার ভেতরে আমরা ১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাই না।

সে সময় মরিয়ম নামের এক নারী বলেন, ‘আমার ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করতে পারে না। তিন মাস ধরে কখনো সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ থাকে না। আমরা এর আগেও কখনো বিদ্যুৎ বিল দেইনি। এখন দিব কেন? আর যদি দিতেই হয়, তাহলে আমাদের হোল্ডিং নম্বর দিতে হবে।’

বিহারিরা ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে এলে আবারও ধাওয়া দেয় পুলিশ। ধাওয়া দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ সময় রাস্তায় কথা বলতে থাকা এক বৃদ্ধকে আটক করে পুলিশ। আটক করে দড়ি দিয়ে বেঁধে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আরো পাঁচজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।

মোহাম্মদপুর আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিয়া সখিনা বলে, কোনো দিন সন্ধ্যায় পড়ার সময় বিদ্যুৎ থাকে না। আমি বাংলাদেশি। না পড়লে দেশের জন্য কিছু করব কীভাবে?

শফিকুল নামের আরেকজন বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে আমরা রাস্তায় নামি। তারপর এখানকার কাউন্সিলর মিজান আসেন। তিনি রাস্তা থেকে আমাদের সরে যেতে বললে তাঁর সঙ্গে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়। এর পরই পুলিশ এসে আমাদের পেটাতে থাকে। আমাদের ছেলেমেয়ে আছে। সামনে আমার মেয়ের জেএসসি পরীক্ষা। পড়তে পারে না। আমাদের দাবি বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।