প্রখ্যাত সাংবাদিক রণেশ মৈত্রর ৮৭তম জন্মদিন পালন

Looks like you've blocked notifications!
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে পাবনায় একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতিক রণেশ মৈত্রর ৮৭তম জন্মদিন পালন করা হয়। ছবি : এনটিভি

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে পাবনায় একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতিক রণেশ মৈত্রর ৮৭তম জন্মদিন পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শুক্রবার রাত ৯টায় কেককাটা, ফুলেল শুভেচ্ছা নিবেদন এবং আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম।

পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক শিবজিত নাগের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন রণেশ মৈত্রর স্ত্রী বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সভাপতি পূরবী মৈত্র, ছেলে অস্ট্রেলিয়ার প্যারামাট্রা সিটির সাবেক কাউন্সিলর প্রবীর মৈত্র, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, অ্যাডভোকেট মো. মহিউদ্দিন প্রমুখ।

সাংবাদিক রণেশ মৈত্র মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলনে সব সময় সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন।

১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর রাজশাহীর নহাটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সংগ্রামী রণেশ মৈত্র। বাবা রমেশ চন্দ্র ছিলেন পাবনার আতাইকুলা থানাধীন ভুলবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। ভাষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য বহুবার কারাবরণ করেন তিনি। ১৯৫৭ সালে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে তিনি ন্যাপে যোগ দেন। পরে ১৯৬৭ সালে তিনি মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন রুশপন্থী ন্যাপে যোগ দেন। দীর্ঘদিন ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবেও রণেশ মৈত্র দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তৎকালীন জেলা প্রশাসক নুরুল কাদের খান জেলার প্রগতিশীল বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে একটি সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটিরও অন্যতম সদস্য ছিলেন রণেশ মৈত্র । বর্তমানে তিনি ঐক্য ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য।

১৯৫১ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে রণেশ মৈত্রর সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়। এরপর কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগে তিন বছর সাংবাদিকতার পর ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে ডেইলি মর্নিং নিউজ এবং ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দৈনিক অবজারভারে পাবনা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯২ সালে দ্য নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি দ্য ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে দেশের শীর্ষ পত্রপত্রিকায় কলাম লিখে সারা দেশে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।

এ ছাড়া ১৯৬১ সালে পাবনায় পূর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত পূর্ব-পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন রণেশ মৈত্র। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা তাদের পেশার স্বীকৃতি পায়। তিনি সেই বছরেই প্রতিষ্ঠিত পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে জেলার সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

সফল আইনজীবী হিসেবেও দীর্ঘদিন রণেশ মৈত্র দায়িত্ব পালন করেন। পরে আইন পেশা থেকেও স্বেছায় অবসর নেন। ২০১৭ সালে তিনি সাংবাদিকতায় একুশে পদক লাভ করেন। তাঁর স্ত্রী পূরবী মৈত্র বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পাবনা জেলা শাখার সভাপতি। চার ছেলে ও মেয়ে সবাই নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

রণেশ মৈত্রর প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রূদ্র চৈতন্যে বিপন্ন বাংলাদেশ’ পাঠক মহলে সমাদৃত। এ ছাড়া তাঁর প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থ ‘নিঃশঙ্ক পথিক’ হলো তাঁর জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্নজনের এক বর্ণিল চিত্রগাঁথা।