গ্রেপ্তার অভিযান চলছে, চলবে : ওবায়দুল কাদের
ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেপ্তার করার পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দুর্নীতির চক্র বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। আপনারা (গণমাধ্যম) যাকে গডফাদার বলছেন তাকে তো গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত ‘কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম’ শীর্ষক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা (গণমাধ্যম) যাকে গডফাদার বলছেন তাকে তো গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান চলছে, চলবে। এটা কোনো দল, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান না। যারা দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যারা দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এটা সরকারের ইচ্ছে, এতে সরকার সংকল্পবদ্ধ। এই লক্ষকে সামনে রেখে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। যাদের যাদের আপনারা সন্দেহ করছেন তারা তো অ্যারেস্ট হচ্ছে। আমাদের সরকারের অভিযান শুরু হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতির চক্র ভেঙে দিতে না পারব, ততক্ষণ অভিযান চলবে। এ অভিযান কোনো দল, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়, এ অভিযানে যে অপরাধী তাকেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সঙ্গে সম্রাটের গ্রেপ্তারের যুগসূত্র নিয়ে বিএনপির অভিযোগ নোংরা রাজনীতি বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা বলেছেন, ভারতের সঙ্গে অসাংবিধানিক অগণতান্ত্রিক চুক্তি আঁড়াল করতে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই উক্তি বিএনপির নেতিবাচক নোংরা রাজনীতি, এই নেতিবাচক রাজনীতির জন্য বিএনপি ক্রমেই সংকোচিত হচ্ছে, ক্রমেই তারা জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে।
সাতটা সমঝোতা স্মারক হয়েছে, তিনটা প্রজেক্টের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। কোথায় কোনটা অসাংবিধানিক? অগণতান্ত্রিক কিছু আছে? এটা তথ্য প্রমাণসহ মির্জা ফখরুল সাহেব আপনাকে দেখাতে হবে, অন্ধকারে ঢিল ছুড়বেন না। আগে বলতেন, দেশ বিক্রি হয়ে গেছে। এখন বলছেন, সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। আগে বলতেন, গোলামির চুক্তি হয়েছে। এখন বলছেন, এই চুক্তি অসাংবিধানিক। মেমোরেন্ডাম আন্ডারস্ট্যান্ডিং কোনো লিখিত চুক্তি নয়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থেকে এটাও আপনারা ভুলে গেছেন? শেখ হাসিনা নিজের দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে কারো সঙ্গে কোনো চুক্তি করেন না। দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখেই তিনি সমঝোতা ও চুক্তি করেন। বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সমন্নত রাখেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে প্রধানমন্ত্রী দিল্লি থেকে ফিরে এসে বলেন, গঙ্গার পানি চুক্তির কথা মনে ছিল না, শেখ হাসিনা সেই প্রধানমন্ত্রী নয়। আজকে যতটা হয়েছে, এতে আমরা লাভবান হচ্ছি। আমাদের জাতীয় সম্পদ ও অর্থনীতি উপকৃত হচ্ছে। ভারতের সেভেন সিস্টারে ট্রাকে করে আমাদের এখান থেকে এলপিজি যাবে, সেখানে প্রচুর আর্থিক সুবিধা আমরা পাব।’
‘আরেকটা বিষয় ভারত যদি আজ আমাদের মোংলা বন্দর ব্যবহার করে, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে, এটা বিনা পয়সায় ব্যবহার করে না। আমাদের আর্থিক সুবিধা দিয়েই তারা ব্যবহার করে। ৭৫ পরবর্তী সময়ে শত্রুতা করে ভারতের কাছ থেকে কিছুই আনতে পারেনি। আমরা শত্রুতা চাই না, শেখ হাসিনা বন্ধুত্বের পথে গেছেন। গেছেন বলেই ৬৮ বছরের সীমান্ত সমস্যা সমাধান হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও ছিটমহল বিনিময় শান্তিপূর্ণভাবে হয়নি, শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা পেয়েছি, আমাদের শর্ত অক্ষুণ্ণ রেখেই বন্ধুত্ব সম্প্রসারিত হয়েছে। তিস্তা নিয়ে আলোচনা দ্বার বন্ধ ছিল। সেই আলোচনা হয়েছে, অগ্রগতি হয়েছে। গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি যিনি করেছেন, তিনিই তিস্তা চুক্তিতেও সফল হবেন। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।
এ সময় রংপুরের উপনির্বাচনে বিএনপির হারের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রংপুরের নির্বাচনে তাদের (বিএনপি নেতাদের) ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছিল বিশাল জয় পেয়ে যাবে। কিন্তু কত ভোট তারা পেয়েছেন? এত জনপ্রিয় দল, তারা নির্বাচনে অংশ নিল। আওয়ামী লীগ তো অংশ নেয়নি। এত জনপ্রিয় দল ভোটার উপস্থিতি এত কম হলো, মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব আপনি দয়া করে জবাব দিবেন কি?’
‘কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম’ শীর্ষক কর্মশালাকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেশে নীরবে ডিজিটাল বিপ্লব হচ্ছে। এর রূপকার সজীব ওয়াজেদ জয় ও ববি। যাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এ উদ্যোগ জাতীয় নির্বাচনে কাজে লাগিয়ে জয়লাভ করেছি। আমাদের ডিজিটাল মিডিয়ায় খুব বেশি আসক্ত হওয়া যাবে না। সেখানে সব নেতিবাচক কথা প্রচার হয় না এখানে ইতিবাচক কিছু কথা আছে, সেগুলো নিতে হবে প্রচার করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের চরিত্র হননের খেলায় না মেতে উঠার আহ্বান জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সামনে জাতীয় সম্মেলন। এই জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে কোনো নেতাকর্মী যেন চরিত্র হননের খেলায় মেতে না উঠেন। এদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সভাপতি হোসেন মোহাম্মদ মুনসুরের সভাপতিত্বে আয়োজিত কর্মশালায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব আব্দুস সবুর, অধ্যাপক মাহফুজুল ইসলাম প্রিন্স, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুনাব আহমেদ নুর, সুফি ফারুক ইবনে আবু বকর বক্তব্য দেন।