বুয়েটে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা, ছাত্রলীগের ২ নেতা আটক

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। আজ সোমবার ভোরে শেরেবাংলা হল থেকে উদ্ধার করা হয় ফাহাদের লাশ।

আবরার ফাহাদ ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলেই থাকতেন। আবরারকে পেটানোর ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহসভাপতি ফুয়াদকে আটক করেছে পুলিশ।  

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছি। এরই মধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে। আমরা যতগুলো সিসিটিভির ফুটেজ আছে, সব সংগ্রহ করেছি। ফুটেজগুলো অত্যন্ত স্বচ্ছ।’

কৃষ্ণপদ রায় আরো বলেন, ‘এ হত্যায় যারা জড়িত, তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কে কোন দলের, এসব বিবেচনায় আসবে না।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে, গতকাল রোববার রাতে শিবির সন্দেহে শেরেবাংলা হলেই আবরারকে জেরা করা হয় এবং পেটানো হয়। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন।

আবরারকে পেটানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা ফুয়াদকে আটক করা হয়। ছবি : সংগৃহীত

পরে ওই কক্ষে এসে দ্বিতীয় দফা আবরারকে পেটানো হয়। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। আজ সোমবার সকালে হলে তাঁদের কাউকেই পাওয়া যায়নি।

মারধরের সময় ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত ৮টার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেজে তার লাইক দেওয়ার প্রমাণ পাই। সে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই। আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুয়েট ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপআইন সম্পাদক অমিত সাহা। পরে প্রমাণ পাওয়ার পর চতুর্থ বর্ষের ভাইদের খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার সেখানে আসেন। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো ওরা মারধর করে থাকতে পারে। পরে রাত ৩টার দিকে শুনি আবরার মারা গেছে।’

এ ব্যাপারে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমরা সিসিটিভির ফুটেজ দেখছি। ঘটনায় কারা জড়িত, তা শনাক্ত করা হচ্ছে।’

হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫ ব্যাচের হাসিবুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সে খুবই ভদ্র ছেলে। পড়ালেখা ছাড়া কিছুই বুঝত না।’

এদিকে এ হত্যার প্রতিবাদে আজ সোমবার দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে বুয়েট অভিমুখে বিক্ষোভ কর্মসূচি করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পলাশী থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করার ঘোষণা দেয় প্রগতিশীল ছাত্রজোট।