‘আবরার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত, রাজনীতির মধ্যে ছিল না’

Looks like you've blocked notifications!
অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে বুয়েটে ভর্তি করিয়েছিলেন মা ছালেহা খাতুন। হঠাৎই জানলেন ছেলে আবরার ফাহাদ আর নেই। বারবার শোকে জ্ঞান হারাচ্ছিলেন ছালেহা। ছবি : এনটিভি

কুষ্টিয়া শহরে পিটিআই রোডে বাড়িটা। গেটটা নীল আর লাল রঙের। ওই গেট আজ সকাল থেকেই খোলা। দরজার সামনে অনেক মানুষের জুতা। বাসার ভেতর থেকে আসছে কান্নার আওয়াজ। মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে আছে পরিবেশ। বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের মা ছালেহা খাতুন মানতেই পারছেন না তাঁর ছেলে আর নেই। ছেলের কথা মনে করে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি।

আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ শোকে স্থির হয়েছিলেন। বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তাঁর ভাই আর নেই। তিনি বলেন, ‘ভাইয়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। রাজনৈতিক কোনো কিছুর মধ্যে ছিল না। জামায়াত বা শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না। ইসলামী উগ্রবাদী কারো সঙ্গেও সে ছিল না।’

গতকাল রোববার রাতে ছেলে আবরার ফাহাদকে ফোন দিয়েছিলেন তাঁর মা ছালেহা। আবরার ধরেননি। এর কিছুক্ষণ পরেই শোনেন ছেলে অসুস্থ, তার কিছুক্ষণ পরে শোনেন ছেলে আর নেই।

আজ সোমবার ভোরে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে উদ্ধার করা হয় আবরারের লাশ। আবরার ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলেই থাকতেন। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের চার নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গায় আবরারদের গ্রামের বাড়ি। তবে কুষ্টিয়া শহরে তাঁর বাবা-মা ও ভাই থাকেন। আবরারের বাবার নাম বরকত উল্লাহ। আবরারের একটিই ছোট ভাই।

এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না আবরারের পরিবারের সদস্যরা। প্রতিবেশীরাও ভেঙে পড়ছেন। ভেজা চোখে তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্কুলজীবন থেকেই আবরার মেধাবী। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

নিহত আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, ‘কাল রাতে কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়। ফোন না ধরায় টেনশন হচ্ছিল। সকালে ভাইয়ার রুমমেট হয়তো ফোন করে বলে যে ফাহাদ অসুস্থ, ঢাকায় কেউ থাকলে আসতে বলেন। একটু পরে ফোন করে বলে যে ফাহাদ আর নেই। তারপর ঢাকায় আমার আত্মীয়রা গিয়ে ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে।’

‘ভাইয়া সব সময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। সেভাবে কারো সঙ্গেই মিশত না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। রাজনৈতিক কোনো কিছুর মধ্যে ছিল না। জামায়াত বা শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না। ইসলামী উগ্রবাদী কারো সঙ্গেও সে ছিল না।

অনেক ছেলেই তো ছিল, তাকে রুম থেকে নিয়ে গেল, পেটানো হলো সেটা কেউ দেখতে পেল না?’

২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন আবরার ফাহাদ।