দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড়া হবে না : রাষ্ট্রপতি

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি : পিআইডি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক নেতাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে ভাল আচরণ করতে হবে। দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড়া হবে না। আমার নিজের লোকজন হলেও তাকে ক্ষমা করা হবে না।’

আজ শুক্রবার বিকেলে নিজ উপজেলা কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে এক সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, 'বিগত বছরগুলোতে প্রত্যাশার বাইরে অবিশ্বাস্য উন্নয়ন হয়েছে হাওরে। হাওরের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় ডুবোসড়ক, সারা বছর চলাচল উপযোগী সড়ক, ঘরে ঘরে বিদ্যুতের কথা হাওরবাসী এক সময় ভাবতেও পারত না। কিন্তু আজ এ সবই বস্তব পরিণত হয়েছে। কাজেই এ উন্নয়নকে রক্ষা করতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে হাওরবাসী। অন্যদিকে একটি চক্র হাওরের জমিজমা কিনে পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। কাজেই কোনো কোম্পানি যেন হাওরে জমি কিনে পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সেদিকে সবার নজর রাখতে পারে।’ এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘তিনি বেঁচে থাকতে কাউকে হাওরের পরিবেশ নষ্ট করতে দেবেন না। সেটা যতবড় শক্তিই হোক না কেন।’

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের সঙ্গে সারাবছর চলাচল উপযোগী যে রাস্তা হয়েছে। সেটা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। হাওরের উপজেলাগুলোকে শহরের মতো সুযোগ সুবিধা দিয়ে সাজানো হবে। কিন্তু এর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য যেন কেউ নষ্ট না করতে পারে সেদিকে সবার নজর রাখতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে হাওরের কোনো কৃষি জমিতে বসতি নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘অনেকে আইন না মেনে হাওরের কৃষি জমির যেখানে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এটি করবেন না।' আইনটি মানতে তিনি স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকাবাসীকে সচেতন থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তৃতায় মিঠামইনে তাঁর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় শিক্ষা জীবন ও রাজনীতিসহ নানা বিষয়ের স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এক সময় এ অঞ্চলের মেয়েরা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্তও পড়াশুনা করত না। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া ভৌগোলিক অবস্থার কারণে এখানের কেউ মারা গেলে জানাজা শেষে তাঁর লাশ হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। এখন আর সেই অবস্থা নেই।’

বিকেল চা টার দিকে মিঠামইনের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক কলেজ প্রাঙ্গণে স্থানীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত সুধী সমাজে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক, উপজেলা চেয়ারম্যান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বোন আছিয়া আলম।

সভায় বক্তব্য দেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আজিজুল হক।

এ সময় রাষ্ট্রপতির ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক নূরু, জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী ও পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ থেকে হেলিকপ্টারযোগে মিঠামইন উপজেলায় পৌঁছলে সেখানে তাঁকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তিনি গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে কামালপুর গ্রামের বাড়ির পাশের জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে বাবা হাজী মো. তায়েব উদ্দিন এবং মা তমিজা খাতুনের কবর জিয়ারত করেন।

সাতদিনের সফরে গতকাল বুধবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ যান। ১৫ই অক্টোবর তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে তিনি কিশোরগঞ্জ ত্যাগ করবেন।