‘বুঝতে পারছি না, সরকার দলে আছি না বিরোধী দলে আছি’

Looks like you've blocked notifications!
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সম্রাটের আইনজীবী শাহনাজ পারভীন হীরা। ছবি : এনটিভি

যুবলীগের সাবেক নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের পক্ষে তাঁর রিমান্ড বাতিলের শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট শাহনাজ পারভীন হীরা। শুরুতেই তিনি আদালতকে জানান, তিনি নিজেও যুবলীগের নেত্রী।

শাহনাজ পারভীন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আইনবিষয়ক সম্পাদক। তিনি আদালতকে বলেন, ‘সম্রাট ভাই পরিস্থিতির শিকার, তিনি দলকে ভালোবাসেন।’

সদ্য বহিষ্কৃত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এ আদেশ দেন। এ ছাড়া সম্রাটের সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক আরমানকেও মাদক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এর আগে আজ দুপুর পৌনে ১ টায় কড়া নিরাপত্তায় সম্রাটকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ঢাকা মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড শুনানিতে বলেন,  ‘মাননীয় আদালত কাকরাইলে সম্রাটকে নিয়ে অভিযানে ১৯ বোতল বিদেশি মদ, চার প্যাকেট তাস ও এক হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, আসামিরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ মাদক, জুয়া ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আরো মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মূল রহস্য উদঘাটনে আরমানের এবং অস্ত্র-গুলির রহস্য উদঘাটনে সম্রাটের রিমান্ড প্রয়োজন।’

সম্রাটের আইনজীবী শাহনাজ পারভীন হীরা শুনানিতে বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত, আমি প্রত্যক্ষদর্শী। আমার একটি পরিচয় আছে। আমি যুবলীগ করি। মামলা সংক্রান্ত প্রয়োজনে আমার পরিচয় দিচ্ছি। গত কমিটিতে ইসমাইল হোসেন সম্রাট ভাই যখন যুবলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ছিলেন তখন আমি সহমহিলা সম্পাদক ছিলাম। এরপরের কমিটিতে যখন সম্রাট ভাই সভাপতি হন, তখন আমি আইন বিষয়ক সম্পাদক হই। বর্তমানে আমি  এ পদে আছি।

শাহনাজ শুনানিতে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমরা এটা বুঝতে পারছি না, সরকার দলে আছি না বিরোধী দলে আছি। সম্রাট ভাইকে যে দিন গ্রেপ্তার করা হলো, সেদিন আমি প্রত্যক্ষদর্শী। আমরা ওই দিন রাতে নেতা-কর্মীসহ ও আমার স্বামীসহ সম্রাট ভাইয়ের কার্যালয়ে যাই। নেতা-কর্মীরা ওই দিন সম্রাট ভাইকে মাছ-মাংস কিনে দেয় এবং তা ফ্রিজে রাখে। আমার স্বামীসহ আমি ওই দিন কার্যালয়ে অবস্থান করেছি।  আমার স্বামী হাসতে হাসতে সম্রাট ভাইয়ের পিয়নকে বলে, দেখি নেতা-কর্মীরা কী পরিমাণ মাছ-মাংস দেয়?  এ বলে ফ্রিজ খুলে দেখে। এরপরের দিনই ওই ফ্রিজ থেকে এত বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। স্যার, আমার বাড়িতে সার্চ করবেন। আর আমি এগুলা রাখব। এটা বিশ্বাসযোগ্য না।’

শাহনাজ আরো বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট পালাইতে চাইলে যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় পালাইতে পারেন। তার জন্য এটা কোনো বিষয় না। সে যেতে চায় নাই। সে দলকে ভালোবাসে। স্যার, আপনি যখন জানবেন আপনার বাসায় সার্চ হবে আপনি কি আপনার বাসায় কিছু রাখবেন? এটা পরিকল্পিত ও মিডিয়া অনেক কিছু দেখাচ্ছে। র‍্যাব পেছনে ব্যাগ নিয়ে উপরে যাচ্ছে স্যার। সার্চ করতে একটা মিডিয়ার লোক বা কাউকে নেয়নি কেন? সম্রাট পরিস্থিতির শিকার। তাঁর কাল হলো জনপ্রিয়তা। তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। আমি গতকাল সম্রাট ভাইয়ের সাথে আইনজীবী হিসাবে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ওই খান থেকে সামান্য একটু হেঁটে আসতে পারেননি তিনি, তাঁকে ধরে আনতে হয়েছে। তাঁর কি বিচার করবেন? তিনি একটুও হাঁটতে পারছেন না। এ রকম ঘটনা ঘটালে তো বিচার করবেন স্যার।

সম্রাটের আইনজীবী আরো বলেন, ‘কারাগার থেকে একটা রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে সম্রাট ভাই অসুস্থ। গত ৯ অক্টোবর তাঁর রিমান্ড শুনানির কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থ থাকায় পিছিয়ে যায়। উনি যে ওপেনহার্ট সার্জারির রোগী ও উনি যে অসুস্থ উনাকে কোনোভাবে রিমান্ডে নেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। সম্রাট ভাই হাসাপাতালে থাকার পরে আইসিউতে ছিল। স্যার, মানবিক কারণে উনার রিমান্ড বাতিল চাচ্ছি।’  

শুনানি শেষে বিচারক সম্রাটের দুই মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন।

এর আগে আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে পুরান ঢাকার আদালত চত্বরে হাজির করা হয় সাবেক এই যুবলীগ নেতাকে। তার আগেই সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন যুবলীগের শত শত নেতাকর্মী। তাঁরা সেখানে সম্রাটের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন। এ সময় আদালত চত্বরে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

গত ৭ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুল হক ভূঁইয়া সম্রাটের বিরুদ্ধে রমনা থানায় দায়ের করা অস্ত্র ও মাদক মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিন ও তাঁর সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে মাদক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রিমান্ডের শুনানি হওয়ার কথা ছিল ৯ অক্টোবর। কিন্তু সম্রাট অসুস্থ থাকায় সেদিন রিমান্ড শুনানি হয়নি।

নথি থেকে জানা যায়, গত ৭ অক্টোবর বিকেল ৪টায় র‌্যাব ১-এর ডিএডি আবদুল খালেক বাদী হয়ে রমনা মডেল থানায় মামলা দুটি করেন। এরমধ্যে মাদক মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক আরমানকেও আসামি করা হয়েছে।

গত ৬ অক্টোবর ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে স্টার লাইন পরিবহনের মুনীর হোসেন চৌধুরীর বাসা থেকে সম্রাট ও তাঁর সহযোগী এনামুল হক আরমানকে আটক করে র‌্যাব। পরে তাঁদের ঢাকায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে র‍্যাব। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে নিয়ে অভিযানে বের হয় র‍্যাব। রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তালা ভেঙে তাঁর কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে অভিযান চালায় র‌্যাবের একটি দল। সেখানে অবৈধ পিস্তল, গুলি, ক্যাঙারুর দুটি চামড়া, ১৬ বোতল বিদেশি মদ, এক হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা, নির্যাতন করার জন্য বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার যন্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়। একই সময় সম্রাটের মহাখালী ও শান্তিনগরের ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র‌্যাব।

পরে কাকরাইলের নিজ কার্যালয়ে ক্যাঙারুর চামড়া রাখার দায়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।  র‍্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এই আদেশ দেন। পরে সম্রাটকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া মাতাল অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়ায় এনামুল হক আরমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে রাতে তাঁকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়।