জিন দূর করার নামে ধর্ষণের চেষ্টা, সাত লাখ টাকা আত্মসাৎ!

Looks like you've blocked notifications!
কবিরাজ মাওলানা মো. কামরুল ইসলাম।

সিলেটের লালবাজার নিশ্চিন্তপুর (তেতলী) এলাকার মেসার্স শাহজালাল মেডিকেল হলের কবিরাজ মাওলানা মো. কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জিন তাড়ানোর নামে এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তিনি ওই তরুণীর কাছ থেকে প্রতারণা করে সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। আর এ কাজে সহযোগিতা করেন তাঁর সহযোগী লিপু।

আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্টে ল রিপোর্টার্স ফোরামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভূগী ওই তরুণী (২৮)।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তরুণী বলেন, শারীরিক সমস্যার কারণে এক বান্ধবীর মাধ্যমে সিলেটের লালবাজার নিশ্চিন্তপুর (তেতলী) এলাকার মেসার্স শাহজালাল মেডিকেল হলে ডাক্তারের কাছে যান। সেখানে ডাক্তার মাওলানা মো. কামরুল ইসলাম রোগ সম্পর্কে ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাবিজ-কবজের মাধ্যমে জিন তাড়ানোর কথা বলেন। সে অনুযায়ী তিনি ওই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এর মধ্যে কামরুল তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করে প্রথমে দুই লাখ, পরে প্রলোভন দেখিয়ে আরো পাঁচ লাখসহ মোট সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। আর এসব কাজে সহযোগিতা করেন তাঁর সহযোগী লিপু।

লিখিত বক্তব্যে ওই তরুণী বলেন, কামরুল ইসলামের কাছে চিকিৎসার জন্য গেলে তিনি আমাকে ভয় দেখিয়ে বলেন, তোমার সঙ্গে জিন আছে। এই জিন থাকলে আস্তে আস্তে মারা যাবা। এমনকি সব দিক দিয়ে ধ্বংস হতে থাকবে। এ ছাড়া নানা ধরনের ভয় দেখান। আর জিন মারতে হলে দুই লাখ টাকা লাগবে। এরই মধ্যে তার সহযোগী লিপু বিভিন্ন রকম এসএমএস করে। সে আমাকে ভালোবাসে এমন অনেক কিছুই আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। কামরুল আমাকে অনেক গল্প শোনাতেন। আমেরিকায়-লন্ডনের অনেক মেয়ের ছবি দেখাতেন আর বলতেন তাঁর জন্য পাগল। তাঁকে বিয়ে করার জন্য মোবাইল ফোনে বিভিন্ন রকম অশ্লীল ছবি দেখাতেন। এবং রোটারিয়ান পাবলিকের একজন সদস্য হিসেবে বিভিন্ন ছবি দেখাতেন এবং বলতেন তিনি আমেরিকার ভিসা পাইলে তাঁর সঙ্গে তিনজনকে নিয়ে যেতে পারবেন। ভিসার জন্য আমার কাছে পাঁচ লাখ টাকা নেন। এ ছাড়া অনেককে আমেরিকা পাঠিয়েছেন তার ছবিও দেখান।

গত ৪ মে কবিরাজ কামরুল ইসলাম আমাকে বলেন, শুধু টাকা দিলে হবে না; তোমার সঙ্গে জিনের বাদশা রয়েছে। এ কারণে তোমার বিয়ে হচ্ছে না। তোমার জিনের বাদশা দূর করতে হলে আমি যা বলব, তোমাকে তা শুনতে হবে। এই বলে আমাকে কামরুল তাঁর চেম্বারের ভেতরে নিয়ে আমার র্স্পশকাতর স্থানে হাত দেন এবং জোরাজুরি করে পাশের খাটে ওপর আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। আমি তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে পরে ঝাপটে ধরার চেষ্টা করেন। এবং জোরে চিৎকার করে বলতে থাকেন এ ঘটনা কাউকে বললে আমাকে মেরে ফেলবেন।       

লিখিত বক্তব্যে তরুণী আরো বলেন, গত ১০ বছরে প্রতারক কামরুল ইসলাম অসহায় মানুষদের ধোকা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। টাকার জোরে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি তার কাছে জিম্মি। এমনকি আইনের ফাঁকফোকর দিয়েও তিনি পার পেয়ে যান।

এ ঘটনায় গত ১১ জুন ওই কবিরাজের বিরুদ্ধে সিলেটে দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা করেন ওই তরুণী। মামলা নম্বর ৭। মামলাটি ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩-এর ৯-৪(খ) তৎসহ পেনাল কোডের ৪২০/৪০৬/৫০৩ ধারায় রুজু করা হয়।

ওই তরুণী বলেন, ‘মামলার পর আসামির লোকজন বিভিন্নভাবে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এরপর আমি ঢাকার মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী ও খিলগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।’

এ অভিযোগের বিষয়ে কবিরাজ কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাঁর বক্তব্য নেওয়ার জন্য খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো জবাব দেননি।