সৌদি থেকে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল শ্রমিক নাজমা
সৌদি আরবে অমানসিক নির্যাতনে নাজমা বেগম (৪০) নামে মানিকগঞ্জের এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে স্বজনদের কাছে বারবার বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন হতভাগ্য ওই নারী। কিন্তু দরিদ্র পরিবারটি তাকে উদ্ধার করতে পারেনি।
মৃত্যুর এক মাস ২৪ দিন পরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দেশে আসে নাজমার মরদেহ।
নাজমা বেগমের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামে।
পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১০ মাস আগে স্থানীয় সিদ্দিক নামের এক দালালের মাধ্যমে সৌদিতে যান নাজমা। হাসপাতালের ক্লিনার হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাকে বাসাবাড়িতে কাজ দেওয়া হয়। যাওয়ার পর থেকেই তাকে ওই বাসাতে পাশবিক নির্যাতন করা হত। মৃত্যুর দুদিন আগেও দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য স্বজনদের কাছে আকুতি জানান নাজমা। অর্থের অভাবে নাজমাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
নিহতের স্বজনরা জানান, স্বামী দেলোয়ার মিয়া মারা যাওয়ার পর দুই ছেলে ও মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার ছিল নাজমার। তাই সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে পাশের রাজেন্দ্রপুর গ্রামের সিদ্দিকের মাধ্যমে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ করে সৌদিতে যান তিনি। হাসপাতালের ক্লিনার হিসেবে চাকরির কথা বলে সিদ্দিক তাকে নানাভাবে প্রলোভিত করে। কিন্তু সৌদিতে তাকে গৃহকর্মী হিসেবে বিক্রি করা হয়। সেখানে যাওয়ার পর থেকেই বাড়ির মালিকের ছেলে তাকে যৌন নির্যাতন করতেন। কথা না শুনলে বেধরক মারপিটও করতেন তাকে ।
এছাড়া ওই পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে নানা অজুহাতে মারপিট করাসহ ঠিকমতো খেতেও দিতেন না। এসব কারণে নাজমা প্রায়ই তার বোন ও ছেলে মেয়েদের ফোন করে কান্নাকাটি করতেন। যেকোনো মূল্যে তাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে বলতেন।
নাজমার ছেলে রাজিব মিয়া জানান, অমানসিক নির্যাতনে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর ভোরে এক সৌদি প্রবাসী তাদের ফোন করে মায়ের মৃত্যুর খবর দেন। সৌদি আরবের আরা শহরের একটি সরকারি হাসপাতালের হিমঘরে তার মায়ের মরদেহ রাখা হয়েছে বলে তাদের খবর দেওয়া হয়। এরপর তারা আবারো দালাল সিদ্দিকের কাছে গিয়ে মরদেহ দেশে আনতে অনুরোধ জানান। কিন্তু মরদেহ আনতেও নানা গড়িমসি করেন সিদ্দিক। মায়ের মরদেহ দেশে আনার মতো অর্থ তাদের ছিল না। পরে সিংগাইর উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে বৈদেশিক কল্যাণ সংস্থার সহযোগিতায় মরদেহ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে আনা হয়। মরদেহের সঙ্গে বৈদেশিক কল্যাণ সংস্থা ৩৫ হাজার টাকাও দিয়েছেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে ইসলামনগর কবরস্থানে দাফন করা হয় নাজমাকে। মায়ের মৃত্যুর জন্য দালাল সিদ্দিকের শাস্তি চান ছেলে রাজিব।