অভিমানী সেই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে চাকরি ফিরে পাচ্ছেন
মৃত্যুর আগের দিন ছেলেকে চাকরিচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত করার অভিযোগে অভিমান নিয়ে চিঠি লেখা সেই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নুর ইসলাম তাঁর চাকরি ফিরে পাচ্ছেন। পাচ্ছেন সরকারি পরিত্যক্ত বড়িটিও।
গতকাল শুক্রবার রাতে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছেলে নুর ইসলামকে চাকরি ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নুর ইসলামের মা নুরুন নাহারকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম এবং নুর ইসলাম।
জেলা প্রশাসক বলেন, নুর ইসলামকে জেলা প্রশাসক অফিসেই চাকরি দেওয়া হবে। ফিরিয়ে দেওয়া হবে তাঁর কোয়ার্টারও।
এরপর জেলা প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের কবর জিয়ারত করেন।
গত বুধবার শ্বাসকষ্টজনিত রোগে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার তাঁকে সদর উপজেলার যোগীবাড়ী গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘গার্ড অব অনার’ দিতে গেলে পরিবার থেকে বাধা দেওয়া হয়। ফলে ‘গার্ড অব অনার’ ছাড়াই ইসমাইল হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়।
মৃত্যুর একদিন আগে ক্ষোভ আর অভিমান নিয়ে চিঠি লেখেন মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘যাঁরা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম-স্যালুট আমার শেষযাত্রার কফিনে আমি চাই না।’
জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম ঘটনাটি তদন্তের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফকে নির্দেশ দেন। তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে চাকরিচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত করার ঘটনায় দিনাজপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
চিঠিতে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করেন বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে এসিল্যান্ড সদর স্যারের মিসেস আমার ছেলেটিকে বাথরুম পরিষ্কার করাসহ মাংস রান্না করতে বললে, মাংস রান্নায় উনিশ-বিশ হওয়ায় অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। পরবর্তী সময়ে এসিল্যান্ড গালাগাল করে ছেলেটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং ড্রাইভার হিসেবে গাড়ি না চালানোর জন্য চাবি ফেরত চান। পরক্ষণে আবার তহশিলদারের মাধ্যমে সরকারি প্রয়োজনে বাড়িটি ছাড়ার জরুরি নোটিশ দেন। বাড়িটি ছাড়তে, অর্থাৎ অন্যত্র বাসা ভাড়া নিতে কিছু বিলম্ব হওয়ায় বাড়ির তালা ভেঙে মালামাল তছনছ করে অন্যদিকে সরিয়ে রাখেন। পরে অত্যধিক চাপ প্রয়োগ করে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং চাবি কেড়ে নেন। চাকরির পর বাসা থেকেও উচ্ছেদ হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেশ কষ্টে দিন যাপন করছেন নূর হোসেন।’