সেই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন
দিনাজপুরের মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের ছেলে নুর ইসলাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে নুর ইসলাম নিজেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
নুর ইসলাম সহকারী কমিশনারের (ভূমি) ব্যক্তিগত গাড়িচালক হিসেবে কাজ করতেন। সম্প্রতি তিনি সেই চাকরিটি হারান; পাশাপাশি সরকারি কোয়ার্টার থেকেও তাঁকে বের করে দেওয়া হয়।
ছেলের চাকরি হারানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন অভিমানে এক চিঠিতে লেখেন, ‘যাঁরা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম-স্যালুট আমার শেষযাত্রার কফিনে আমি চাই না।’
এরপর গত বুধবার শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন মারা যান। বৃহস্পতিবার তাঁকে সদর উপজেলার যোগীবাড়ী গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সরকারি বিধি মোতাবেক জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘গার্ড অব অনার’ দিতে গেলে পরিবার থেকে বাধা দেওয়া হয়। ফলে ‘গার্ড অব অনার’ ছাড়াই ইসমাইল হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়।
ঘটনাটি শুনে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম তদন্তের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফকে নির্দেশ দেন। তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে যান এবং তাঁর কবর জিয়ারত করেন। পরে নুর ইসলামের মা নুরুন নাহারের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হারানো চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু শনিবার বিকেলে নুর ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে চাকরি ফিরে পাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাকরিচ্যুত হওয়ার কারণে কষ্ট পেয়ে আমার বাবা মারা গেছেন। এখন আর আমি সেই চাকরি করতে চাই না। যে কষ্ট নিয়ে বাবা মারা গেছেন, সেই চাকরি করা আমার জন্য কষ্টদায়ক। তাই আমরা পারিবারিকভাবে এই চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছি। আমার মা নুরুন নাহার, বড় ভাই নুরুজ্জামান সবাই চাকরি প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন।’
চিঠিতে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করে লিখেছিলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে এসিল্যান্ড সদর স্যারের মিসেস আমার ছেলেটিকে বাথরুম পরিষ্কার করাসহ মাংস রান্না করতে বললে, মাংস রান্নায় উনিশ-বিশ হওয়ায় অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। পরবর্তী সময়ে এসিল্যান্ড গালাগাল করে ছেলেটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং ড্রাইভার হিসেবে গাড়ি না চালানোর জন্য চাবি ফেরত চান। পরক্ষণে আবার তহশিলদারের মাধ্যমে সরকারি প্রয়োজনে বাড়িটি ছাড়ার জরুরি নোটিশ দেন। বাড়িটি ছাড়তে, অর্থাৎ অন্যত্র বাসা ভাড়া নিতে কিছু বিলম্ব হওয়ায় বাড়ির তালা ভেঙে মালামাল তছনছ করে অন্যদিকে সরিয়ে রাখেন। পরে অত্যধিক চাপ প্রয়োগ করে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং চাবি কেড়ে নেন। চাকরির পর বাসা থেকেও উচ্ছেদ হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেশ কষ্টে দিন যাপন করছি আমি।’