প্রাণভিক্ষা সরকারের আবিষ্কার : হুম্মাম
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি। তিনি মামলাটি পুনর্বিচারের আবেদন জানিয়েছিলেন। প্রাণভিক্ষার যে আবেদনের কথা বলা হচ্ছে, এটি সরকারের নিজেদের আবিষ্কার।
আজ রোববার সন্ধ্যায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রাম নগরীর চন্দনপুরায় গুডস হিলের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এ অভিযোগ করেন।
urgentPhoto
গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। একই মঞ্চে ফাঁসি কার্যকর করা হয় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের।
এ রায় কার্যকরের আগে দিনভর চলে প্রাণভিক্ষা নিয়ে নানা নাটকীয়তা। সরকারের পক্ষ থেকে দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন। সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র, আইন মন্ত্রণালয় হয়ে রাতে যায় বঙ্গভবনে। পরে রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন।
শুরু থেকেই সরকারের ভাষ্যের সঙ্গে ‘দ্বিমত পোষণ’ করে আসছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরা। রাতে পরিবারের সদস্যরা কারাগারে তাঁদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করেন। বেরিয়ে এসে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে জানান, দুজনের কেউই প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি।
আজ রোববার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের পরিবারের দাবিকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, দুজনের প্রাণভিক্ষার আবেদন ও সংশ্লিষ্ট প্রমাণ সরকারের কাছে রয়েছে।
রোববার সকালে নিজ গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দাফন করা হয়। তার পরই সন্ধ্যায় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে প্রাণভিক্ষার বিষয়টি নিয়ে আবারও কথা বলেন পরিবারের সদস্যরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী, ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী ফাইয়াজ, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, মেয়ে পারভীন কাদের চৌধুরী, ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামাল উদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে পুনর্বিচারের জন্য একটি আবেদন করেছি। আবেদনের এটাই সারকথা। কোনো পাগলও বিশ্বাস করবে না, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ক্ষমা চাইবেন এবং কোনো পাগলও বিশ্বাস করবে এই সরকার তাঁকে ক্ষমা করবে।’
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন বলে জানান ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করি, মিডিয়া থেকে বলা হচ্ছে যে, জেল থেকে একটি কাগজ বের হয়েছে, সেখানে উনার (সাকা চৌধুরী) সই আছে। উনি আবারও হাসতে হাসতে... উনার যে স্টাইল... হাসতে হাসতে বললেন, এই সরকার মেরে ফেলার পর কত কত নাটক করবে, কত ধরনের কাগজ আবিষ্কার করবে এটা তোমরা নিজেরাই দেখবা।’
সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর শেষ ইচ্ছে ছিল মৃত্যুর পর রাঙ্গুনিয়ায় যেন তাঁকে দাফন করা হয়। কিন্তু সরকার তা করতে দেয়নি।
পরিবারের সদস্যরা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ‘নির্দোষ’ ছিলেন উল্লেখ করে আরো বলেন, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। সত্য একদিন প্রকাশ হবে। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের আগে পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎকালে তিনি অবিচল ও হাসিমুখে ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন পরিবারের সদস্যরা।