আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধে বিপাকে আবেদনকারীরা

Looks like you've blocked notifications!

সিলেটে বন্ধ রয়েছে আবাসিক পর্যায়ে গ্যাস সংযোগ। এর ফলে যারা গ্যাস সংযোগের আবেদন করে রেখেছিলেন তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। এমন আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে গ্যাসের মজুদ কমে আসায় আবাসিক পর্যায়ে আর গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণেই এসব আবেদনকারী নতুন করে গ্যাসের সংযোগ পাচ্ছেন না।

সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় জালালাবাদ গ্যাস ক্ষেত্র এলাকায় সিলেট ও মৌলভীবাজারের চারটি ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের অধীন যেসব কাজের দরপত্র হয়েছিল তাও বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সিলেটের বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় সম্প্রতি গ্যাস সংযোগের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। গত বছর এসব এলাকায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যাসের ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন করা হয়।

জালালাবাদ গ্যাস কন্ট্রাক্টরস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা দাবি করেছেন, সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে হঠাৎ করে আবাসিক গ্যাস সংযোগের আবেদন গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডটি সিস্টেম লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, সিলেট থেকে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিড লাইনে যুক্ত হচ্ছে। আর সিলেটে প্রতিদিন সরবরাহ করা হচ্ছে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে আবাসিক খাতে মাত্র সাত ভাগ আর বাকিটুকু ব্যবহৃত হচ্ছে বাণিজ্যিক খাতে। সিলেটে আবাসিক খাতে গ্যাসের গ্রাহক রয়েছেন ৭০ হাজার।

সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি এক আদেশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডটি সিস্টেম লিমিটেডের অধীন এলাকা ব্যতীত দেশের সব অঞ্চলে সংযোগ ও লোড বৃদ্ধির আবেদন নির্দিষ্ট কমিটির অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর সারা দেশে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকলেও সিলেটে চালু ছিল।

একই বছরের ৮ জুলাই পুনরায় আরেকটি নির্দেশনায় জালালাবাদ গ্যাস লিমিটেডকে নতুন সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সারা দেশের মতো নির্ধারিত কমিটির অনুমোদন নেওয়ার আদেশ জারি করা হয়।

ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে যারা নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করেছিলেন তাঁদের সংযোগ দেওয়াও বন্ধ করে দেয় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এতে নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করা প্রায় তিন হাজার গ্রাহকের গ্যাস পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

এদিকে প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক স্থাপনের দরপত্র আহ্বান করে শিডিউল গ্রহণ করা হয়। তবে দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখনো এসবের কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে না।

এরই মধ্যে গ্যাস সরবরাহের জন্য মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় ২৫ কিলোমিটার, সিলেটের রশিদপুরে ১৫ কিলোমিটার, ওসমানীনগরের তাজপুরে ২২ কিলোমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জের বিয়ানীবাজার থেকে ভাটেরা এবং কুলাউড়া থেকে ব্রাহ্মণবাজার পর্যন্ত গ্যাসের ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে শত কোটি টাকা। সম্প্রতি ডিস্ট্রিবিউশন লাইন স্থাপন কাজ করার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হলেও তা মৌখিকভাবে বাতিল করা হয়েছে।

জালালাবাদ গ্যাস কন্ট্রাক্টরস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোজাম্মেল হক জিল্লু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বর্তমানে নতুন সংযোগের আবেদন নেওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’

জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল ইসলাম খান গ্যাস সংযোগ বন্ধের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে গত মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) সিলেট সার্কিট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘দেশে যে পরিমাণ গ্যাসের মজুদ রয়েছে তা দিয়ে বড়জোর ১৩/১৪ বছর চলতে পারে। আবাসিক খাতে গ্যাসের ব্যবহার মানে গ্যাসের অপচয়। তাই আমরা আবাসিক খাতে আর গ্যাস সংযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’