২ বছরে বিএনপির ৫০০ নেতা-কর্মীকে হত্যা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের গত দুই বছরে বিএনপির কমপক্ষে ৫০০ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কমপক্ষে ৩০০ নেতা-কর্মীকে গুম করেছে। সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের খুন, গুম ও জেলে পুরে ফাঁকা মাঠে গোল করতে চায়। কিন্তু বিএনপি সেই সুযোগ দেবে না।
urgentPhoto
আজ শনিবার দুপুর আড়াইটায় দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আজাদুল ইসলাম আজাদের নির্বাচনী প্রচারে এসে এক পথসভায় একথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনারা জানেন, গত কয়েক বছরে এই সরকার আমাদের বিরোধী দলের কত নেতা-কর্মীকে খুন করেছে, হত্যা করেছে, জখম করেছে? হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে জেলে পুরে দিয়েছে। আজকে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও ছয় হাজার নেতা-কর্মীকে জেলে দিয়েছে। গত দুই বছরে আমাদের কমপক্ষে ৫০০ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কমপক্ষে ৩০০ জন নেতা-কর্মী গুম হয়ে গেছেন। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী বিভিন্ন জায়গায় গুম হয়ে গেছেন। তাঁরা আর ফিরে আসেননি। তাঁদের সন্তানরা, তাঁদের মা-বাবারা, তাঁদের স্ত্রীরা জানেন না বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন। তাঁদের জানাজা পড়ারও সুযোগ হয়নি। তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়ারও সুযোগ পাচ্ছে না। তাঁরা জানেন না বেঁচে আছেন না মরে গেছেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার যারা বিনা ভোটে নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করেছে, সেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মানুষ ভোট দেয়নি। সরকার কাউকে ভোট দিতে দেয়নি। কিন্তু তারা ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। আর ১৪৬টি আসনে ৫% লোকও ভোট দিতে যায়নি।’
পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে হঠাৎ করে, তড়িঘড়ি করে, তাড়াহুড়া করে এই পৌরসভা নির্বাচনটাকে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছে তারা। কারণটা কী? উদ্দেশ্যটা কী? উদ্দেশ্য একটা আছে। বিরোধী দলের সব নেতা-কর্মী জেলে যাচ্ছে। ছয় হাজার পাঠিয়েছে। বড় বড় নেতারা মামলায় জর্জরিত। আমি তো কিছুদিন আগে জেল থেকে বেরিয়ে আসলাম। সব জেলের মধ্যে। তাদের মাঠ ফাঁকা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ফাঁকা মাঠে গোল করেছে। এবারও ভেবেছে ফাঁকা মাঠেই বোধহয় গোল হবে। কিন্তু আমরা আর বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে দেব না। এ জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পৌরসভা নির্বাচন তিনি করবেন। দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবেন।’
এ সময় তিনি আগামী ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনে সবাইকে ধানের শীষে ভোট দিতে ও ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিরামপুর থানা বিএনপির সভাপতি আশরাফ আলী মণ্ডলের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান মিয়া, এ জেড এম রেজওয়ানুল হক, জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান প্রমুখ।
বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী আজাদুল ইসলাম আজাদ (৫৩) গত মঙ্গলবার রাতে শহরের ইসলামপাড়া আনসার-ভিডিপি অফিসের পেছনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। বর্তমানে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এর আগে আজ দুপুর ১২টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিনাজপুরের নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে দলীয় মেয়র পদপ্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের নির্বাচনী প্রচারে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, হঠাৎ করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার পেছনে সরকারের দুরভিসন্ধি পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের খুন, গুম ও জেলে পুরে ফাঁকা মাঠে নির্বাচন করতে চায় সরকার। ফাঁকা মাঠে নির্বাচনে জয়লাভ করে বহির্বিশ্বে তাদের জনপ্রিয়তা দেখাতে চায়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ধানের শীষের প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কেন্দ্রগুলো থেকে ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এ নির্বাচন বিএনপি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
এ সময় জেলা বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।