সাঁথিয়ায় ‘বিদ্রোহী’ সমস্যায় আ. লীগ-বিএনপি

Looks like you've blocked notifications!
পাবনায় সাঁথিয়ায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক (বাঁয়ে) ও বিএনপির সিরাজুল ইসলাম লড়াই করছেন। ছবি : এনটিভি

পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন তিন প্রার্থী। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের মিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক, বিএনপির সিরাজুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম ওরফে বকুল হোসেন।

এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক নিজ দলের ভেতরে ঐক্য বজায় রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম নিজ দলের ভেতরে ঐক্যচেষ্টার পাশাপাশি জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় ব্যস্ত।

আর জামায়াত নেতা বকুল হোসেনের দলে ঐক্য থাকলেও তিনি বিএনপির সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর নিজ এলাকা হওয়ায় সাঁথিয়ায় দলটির শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। গত তিনটি পৌর নির্বাচনেই জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা ছিলেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

আওয়ামী লীগের ১০-১২ জন নেতাকর্মী জানান, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর চেষ্টা করেছিলেন বর্তমান মেয়র মিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ দেলু, সাধারণ সম্পাদক তপন হায়দার সান, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম বাচ্চু, কৃষক লীগের নেতা নফিজ উদ্দিন প্রমুখ। তাঁদের মধ্যে মিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক দলীয় মনোনয়ন পান। এতে আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ দেলু, তপন হায়দার সান ও মাহবুবুল আলম বাচ্চু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও নফিজ উদ্দিন প্রার্থী হয়েছেন।

নফিজ উদ্দিন প্রার্থী থাকায় কিছুটা হলেও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন মিরাজুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা। তবে তারা সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন, তা হলো দলের সব নেতাকর্মী এককাট্টা হয়ে মিরাজুলের পক্ষে কাজ করছেন না। তাঁদের অভিযোগ, দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতা নির্বাচন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলেও তাঁরা আন্তরিকভাবে এখনো মাঠে নামেননি। তাই মিরাজুল ও তাঁর কর্মী-সমর্থকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন দলের সব নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে প্রচার চালানোর।

এ ব্যাপারে মিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, ‘দলের সবাই একাত্ম হয়ে কাজ করছেন এ কথা বলা যাবে না। তবে আশা করছি, বিষয়টি ঠিক হয়ে যাবে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ দেলু বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তাই এ নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। তারপরেও দলীয় প্রার্থী যাতে জয়ী হতে পারেন, সে ব্যাপারে আমরা একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করছি।’

এদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর নাজমুল বারী নাহিদ, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ আলী ও সাবেক ছাত্রনেতা আশিক ইকবাল রাসেল। তাঁদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন সিরাজুল ইসলাম। এতে মীর নাজমুল বারী নাহিদ ও আশরাফ আলী নির্বাচন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলেও প্রার্থী হয়েছেন সাইফুল ইসলাম ও আশিক ইকবাল রাসেল। প্রার্থী হওয়ার কারণে এরই মধ্যে সাইফুল ইসলামকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তাই বিএনপির প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের পক্ষেও সব নেতাকর্মী একাট্টা হয়ে কাজ করছেন না বলে জানা গেছে। তবে এই মধ্যেই পৌর, উপজেলা ও জেলাপর্যায়ের নেতারা মরিয়া চেষ্টা করছেন সব নেতাকর্মী যাতে একাত্ম হয়ে সিরাজুলের পক্ষে কাজ করেন। এ ছাড়া বিএনপি নেতারা জামায়াতের সঙ্গেও সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধারণা, জামায়াতের ভোট বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে এলে জয় সুনিশ্চিত হবে।

বিএনপি প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী কোনো সমস্যা না। দলের সবাই আমার জন্য একাত্ম হয়ে কাজ করছেন। আর জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার প্রক্রিয়া চলছে।’

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার হাবিবুর হাবিবুর রহমান তোতা বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের একাত্ম করার প্রক্রিয়া চলছে। জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম ওরফে বকুল হোসেন মনোনয়ন পাওয়ার দলে কোনো কোন্দল নেই। ফলে দলের সবাই একাত্ম হয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করছেন।

জামায়াতের তিন-চারজন নেতাকর্মী জানান, যেহেতু সাঁথিয়ায় জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে, তাই বিএনপির উচিত জামায়াতের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া। এ বিষয়টি জামায়াতের সব নেতাকর্মী আশা করছেন বলেও তাঁরা জানান।

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতা হবে কি না, জিজ্ঞাসা করা হলে বকুল হোসেন বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী। কাজেই বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতা হবে কি না, তা আমি কীভাবে বলব?’