নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ বলা যায় না : সিপিবি

পৌরসভা নির্বাচনকে কোনোভাবেই জনগণের প্রত্যাশিত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। এ ছাড়া ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়নি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ এ দাবি করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনকে কোনোভাবেই জনগণের প্রত্যাশিত অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করা যায় না। ভোটে সর্বত্র জনগণের অংশগ্রহণ ও ভোটের দিনে উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি। অনেক স্থানে সব ভোটার নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেনি। নানা করচুপির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ফলে ভোটের ফলাফলে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটেনি। নির্বাচনকে প্রহসনের ধারা থেকে মুক্ত করা যায়নি। তাই এই নির্বাচনের ফলাফলকে জনগণের মতামতের প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।’
বিবৃতিতে সিপিবির নেতারা বলেন, ‘জামানতের টাকা বাড়িয়ে ও নির্বাচনকে কুৎসিত টাকার খেলায় পরিণত হতে দিয়ে নিষ্ঠাবান অথচ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মানুষদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। এরপরও নির্বাচনে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় দলসগুলোর অংশগ্রহণ থাকলেও ক্ষমতাসীন ও দ্বি-দলীয় ধারার দলগুলো অতীত দিনে যেমন নির্বাচন ব্যবস্থাকে অবাধ নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারেনি, এবারও স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনকে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন, স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, দুর্নীতিমুক্ত স্থানীয় শাসন ইত্যাদি মূল ইস্যুগুলো পেছনে ফেলে দিয়ে জাতীয় রাজনীতির ক্ষমতাকেন্দ্রিক ভোটে রূপান্তরিত করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সাধারণ মানুষের কাছে আরো অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিগত নির্বাচনের মতো এবারও নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে টাকার খেলা, নানাভাবে পেশি শক্তির ব্যবহার, সাম্প্রদায়িক প্রচারণা ও ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং রোধ করতে নির্বাচন কমিশন দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী প্রশাসনের প্রত্যেক স্তরে স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানের ওপর ‘স্থানীয় শাসনের ভার’ প্রদান করা হয়েছে। অথচ পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কাউন্সিলর এবং নির্বাচিত মেয়রদের সমন্বয়ে স্থানীয় শাসন বিষয়ে দায়িত্ব কর্তব্য ও অঙ্গীকারের বিষয়টি ছিল অনুপস্থিত।
বিবৃতিতে নেতারা আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে বিদ্যমান দ্বি-দলীয় ধারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারাও তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ অবস্থায় অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন, গণতন্ত্র, সর্বত্র জনগণের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থায় আমূল সংস্কারের লড়াই জোরদার করতে হবে। সিপিবি সেই সংগ্রাম এগিয়ে নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
বিবৃতিতে দ্বি-দলীয় ধারার বিপরীতে বাম-গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তি ও ব্যক্তিদের বিকল্প শক্তির সমাবেশ গড়ে তুলতে এবং সচেতন মানুষকে দ্বি-দলীয় ধারার রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানানো হয়।