অর্থ লেনদেনের জেরেই ৩ শিশুকে পুড়িয়ে হত্যা
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় অর্থ লেনদেনের জের ধরেই তিন শিশুকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে, ঘরে তালাবদ্ধ করে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শৈলকুপা থানার পেছনে কবিরপুর গ্রামের মসজিদপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) গোপীনাথ কাঞ্জিলাল।
নিহতরা হলো শৈলকুপা পাইলট হাইস্কুলের কারিগরি বিভাগের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোস্তফা সাফিন (১০), মোস্তফা আমীন (৮) ও ভাগ্নে মাহিম (১৩)। এর মধ্যে দুই ভাই সাফিন ও আমীন স্থানীয় কবিরপুর কিন্ডারগার্টেন স্কুলের তৃতীয় ও প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। আর মাহিম শৈলকুপা পাইলট হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত।
পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দেলোয়ার হোসেনের (৪০) বড় ভাই ইকবাল হোসেনকে (৪৩) আটক করেছে। ইকবাল ওই গ্রামের গোলাম নবীর ছেলে। তিনি প্রায় আট বছর সিঙ্গাপুরে ছিলেন। চার মাস আগে বাড়ি আসেন। সিঙ্গাপুর থেকে তিনি বাবা গোলাম নবীর কাছে অর্থ পাঠাতেন। সেই টাকা লেনদেনের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর বোন শিক্ষিকা জেসমিন আক্তার। আগুনে পুড়ে জেসমিনের ছেলে মাহিমও নিহত হয়েছে।
প্রতিবেশীরা জানায়, ইকবাল বিদেশে থাকা অবস্থায় বাবার কাছে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকার মধ্যে ৪০ লাখ টাকা নিয়ে দুই ভাই দেলোয়ার ও ইকবালের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিদেশে থাকা অবস্থায় ইকবালের টাকা নিয়ে তাঁর স্ত্রী কামিনীরও বিরোধ বাধে দেবর ও শ্বশুরের সঙ্গে। পরে তিনি সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় চলে যান।
সার ব্যবসায়ী গোলাম নবী বলেন, বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর ছেলে ইকবালকে দোকানে বসানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হই। তিন শিশুকে হত্যার জন্য ইকবালকে সরাসরি দায়ী করেন তিনি।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে দেলোয়ার হোসেন জানান, বড় ভাই ইকবাল হোসেন সন্ধ্যায় তাঁর দুই শিশু সন্তানকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। তারপর সেখানে যায় ভাগ্নে মাহিম। ইকবাল হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তিনজনকে আহত করেন। এরপর গ্যাস সিলিন্ডার খুলে ঘরে তালা লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। তিনি তখন বাজারে ছিলেন। বাবা গোলাম নবী ফোন করে বিষয়টি তাঁকে জানান।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আহতদের উদ্ধার করেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘরের ভেতরেই মারা যায় মোস্তফা সাফিন ও মোস্তফা আমীন। ভাগ্নে মাহিমকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত ৮টার দিকে মারা যায়।
নিহতদের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে এএসপি গোপীনাথ কাঞ্জিলাল বলেন, ‘পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে শরীরে রক্তমাখা অবস্থায় ইকবালকে আটক করা হয়েছে। তিনি প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছেন।’
রাতে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতাল ও শৈলকুপা থানায় হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে। তারা এ ঘটনার বিচার দাবি করে স্লোগান দেয়।
এলাকাবাসী জানায়, ইকবালের বাবা গোলাম নবীর থানার সামনে সারের দোকান রয়েছে। ইকবালের বোন জেসমিন আক্তারও শৈলকুপা পাইলট হাইস্কুলের শিক্ষিকা। ইকবাল আট বছর আগে সিঙ্গাপুরে যান। তাঁর স্ত্রী কামিনী বেগম দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। ইকবাল ও দেলোয়ার পাশাপাশি বাড়িতেই থাকেন। জেসমিন আক্তারের বাড়িও কবিরপুরেই।
জেসমিন আক্তার হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যায় ইকবাল তাঁর দুই ভাইপো সাফিন ও আমিনকে নিজের বাড়িতে ডেকে নেয়। এরপর তাদের হাত-পা বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পিটাতে শুরু করে। তাদের ডাক চিৎকারে সেখানে ছুটে যায় তাঁর ছেলে মাহিম। এ সময় তাকেও কৌশলে আটক করে মারপিট করতে থাকেন।
এ সময় দেলোয়ার ও তাঁর বাবা গোলাম নবী বাধা দিতে ছুটে আসেন। একপর্যায়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে গ্যাস সিলিন্ডার ছেড়ে আগুন ধরিয়ে দেন ইকবাল। তারপর বাইরে দিয়ে তালা দিয়ে আটকে দেন। প্রচণ্ড ধোয়া ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। প্রতিবেশীরা পুলিশ ও শৈলকুপা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে খবর দেয়। তাঁরা এসে ঘরের তালা ভেঙে আগুন নিভিয়ে দগ্ধ তিনজনকে উদ্ধার করে।